বিজ্ঞাপন
default-image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সিলেটের দিকে ১৮ মাইল গেলেই মাধবপুর। ২৮ এপ্রিল সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সেখানে সংঘটিত হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মনির আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ছোট দলের নেতৃত্ব দেন।

সেদিন সকাল আটটার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে প্রথমে কামানের ব্যাপক গোলা নিক্ষেপ করে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের পরিখার ভেতর থেকে রিকোয়েললেস রাইফেল মেশিনগান, হালকা মেশিনগান, মর্টার, রাইফেল প্রভৃতি অস্ত্রের সাহায্যে আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মর্টার প্লাটুন পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। তার পরও পাকিস্তানি সেনারা প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে সামনে এগিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা চরম সংকটের মধ্যে পড়েন। তখন মনির আহমেদ তাঁর দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তাঁদের পাল্টা হামলায় পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে পিছিয়ে যান। পেছনে নতুন জায়গায় প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তুলে আবার যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ওপর আবার আক্রমণ করে। দুই পক্ষের মধ্যে এখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা এ যুদ্ধে যথেষ্ট সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দেন। অসাধারণ বীরত্ব আর নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকজন শহীদ হন। কয়েকজন আহত হন। হতাহত হয় কমপক্ষে ২৭০ জন পাকিস্তানি সেনা।

মনির আহমেদ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। তিনি প্রথমে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে। পরে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের একাদশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভৈরব, আশুগঞ্জ, আখাউড়াসহ কয়েকটি জায়গায় বীরত্বের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান