বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাঁচদোনায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মো. মতিউর রহমান।

পাঁচদোনায় সড়কের দুই ধারে ছিল ঝোপঝাড়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা আত্মগোপন করে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আরও ছিলেন স্থানীয় দুঃসাহসী কয়েকজন গ্রামবাসী। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করেন।

সেদিন ছিল সড়ক জনশূন্য। একসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোটা পাঁচেক সেনাবাহী লরি দেখতে পাওয়া যায়। পেছনেও আরও কয়েকটি গাড়ি। সেগুলোও সেনাবাহী। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাবুরহাটের দিক থেকে।

গত কয়েক দিন পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় তেমন কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। জনশূন্য পথে তারা বেশ নিশ্চিন্ত মনেই আসছিল। সামনের লরিগুলো অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র মো. মতিউর রহমান সংকেত দেন। সঙ্গে সঙ্গে শান্ত পল্লি-প্রকৃতিকে চমকে দিয়ে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। মুক্তিযোদ্ধাদের মর্টার দলের ছোড়া তিনটি মর্টারের গোলার একটা গোলা পড়ে লরির ওপর। একই সময় গর্জে ওঠে তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছে থাকা মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্র।

তখন পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এমন অপ্রত্যাশিত আক্রমণের মুখে পড়তে হবে, তা ওরা ভাবতেই পারেনি। প্রথম ধাক্কাতেই হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। হতভম্ব পাকিস্তানি সেনারা অবশ্য কিছুক্ষণ পর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

মো. মতিউর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। তাঁর সাহস দেখে সহযোদ্ধারা আরও উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হতাহত হয় শতাধিক সেনা। তিনটি লরি অচল হয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে হতাহত সেনাদের সচল লরি ও গাড়িতে তুলে নিয়ে তারা সন্ধ্যার আগেই পশ্চাদপসরণ করে বাবুরহাটে। পরদিন সেখানে আবার যুদ্ধ হয়।

মো. মতিউর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ বালুচ রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি ছুটিতে ছিলেন। তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩০ মার্চ ময়মনসিংহে সমবেত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। সেখানে পুনর্গঠিত হয়ে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। নলুয়া চা-বাগান, আখাউড়া, আশুগঞ্জসহ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেন। বেশির ভাগ যুদ্ধেই তিনি অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান