বিজ্ঞাপন
default-image

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেন না। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই পিছু হটতে বাধ্য হলেন। কিন্তু পিছু হটল না তাদের ক্ষুদ্র একটি দল। তারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য ফাঁদ পাতল। ফাঁদ পাতার এই দলে আছেন বাচ্চু মিয়া। ঘণ্টা কয়েক পর তাঁদের ফাঁদে পা রাখল একদল পাকিস্তানি সেনা। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল বাচ্চু মিয়াসহ সব মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক পাকিস্তানি সেনারা। হতাহত হলো তাদের অনেকে। এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে মাধবপুরে।

মাধবপুর হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। এপ্রিল মাসের শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল অবস্থান নিয়েছিল শাহবাজপুরে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্তিশালী দল অবস্থান নেয় শাহবাজপুর সেতুর অপর প্রান্তে। অপর একটি দল হেলিকপ্টারে প্যারাড্রপিং করে অবস্থান নেয় বাচ্চু মিয়াদের দলের পেছন ভাগে। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে বাচ্চু মিয়াদের দল শাহবাজপুর ছেড়ে অবস্থান নেয় মাধবপুরে।

তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন মতিন (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল)। বাচ্চু মিয়ারা মাধবপুর নদকে সামনে রেখে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলেন। তাঁদের এই অবস্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জঙ্গি বিমান ও আর্টিলারির সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এতে তাঁদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা পিছু হটেন। কিন্তু বাচ্চু মিয়াসহ ১০-১২ জন চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের অবস্থানে থেকে যান। তাঁদের কাছে উন্নত অস্ত্র বলতে ছিল চারটি এলএমজি। বাকি সব রাইফেল। তাই নিয়ে তাঁরা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের জন্য ফাঁদ পাতেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রগামী দল কোথাও বাধা না পেয়ে ভেবেছিল, মুক্তিযোদ্ধারা সব মাধবপুর ছেড়ে চলে গেছেন। তারা বেশ ঢিলেঢালাভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। সেনারা সেতুর মাঝামাঝি আসামাত্র বাচ্চু মিয়াদের অস্ত্র একসঙ্গে গর্জে ওঠে। আকস্মিক এই আক্রমণে অগ্রগামী দলের অনেকে হতাহত হয়। এরপর বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোদ্ধারা ত্বরিত ওই এলাকা থেকে পশ্চাদপসরণ করেন। এই অ্যামবুশে তিনি অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

বাচ্চু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট সেক্টরের অধীন চিমটিখিল বিওপিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। পরে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টর ও নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান