১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে সামসুল আলম সিদ্দিকীসহ (এস এ সিদ্দিকী) একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন শেরপুর-সাদিপুরে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার সংযোগস্থল।
৮ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হন। একাংশ সিলেট শহরে, একাংশ খাদিমনগর এবং একাংশ আম্বরখানা ও ওয়্যারলেস স্টেশনে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। তাঁদের আরেকটি অংশ ছিল সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে। তাঁরা বেশির ভাগ ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। এই দলে ছিলেন সামসুল আলম সিদ্দিকী।
২৩ এপ্রিল সকাল থেকে সামসুল আলম সিদ্দিকীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ব্যাপক গোলাবর্ষণের মুখে পড়েন। কিন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে ছিল তাঁদের দলের একটি এলএমজি পোস্ট। সেখানে পকিস্তানি সেনারা বিরামহীনভাবে গোলাবর্ষণ করে। এলএমজি ম্যান শহীদ হন। ফলে তাঁদের দলগত প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়ে।
সামসুল আলম সিদ্দিকী কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করতে থাকেন। তাঁদের সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা অনেকক্ষণ নদী পারাপারে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে। তাঁর উপদলের অবস্থানের ডান দিকে ছিল তাঁদের দলের আরআর চালনাকারী উপদল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের চাপে ওই দলও অবস্থান ছেড়ে চলে যায়। তখন তাঁরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েন।
এতে অবশ্য বিচলিত হননি সামসুল আলম সিদ্দিকী। কিন্তু ভারী অস্ত্রের সমর্থন না থাকায় তাঁরা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা অবস্থান ছেড়ে পেছনে যেতে বাধ্য হন। এ সময় অন্য উপদলের আতঙ্কগ্রস্ত কয়েকজন সহযোদ্ধার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তাঁরা জানান, পাকিস্তানি সেনারা একদম কাছে চলে এসেছে। এরপর তাঁর ওই সহযোদ্ধারা পালিয়ে যান। এর পরের ঘটনা সে আরেক কাহিনি।
সামসুল আলম সিদ্দিকী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে এ রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি (চার্লি) ছিল ময়মনসিংহে ইপিআর বাহিনীর ২ নম্বর উইং হেডকোয়ার্টার্সে। এ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন তিনি।
২৭ মার্চ বাঙালি ইপিআর সেনারা বিদ্রোহ করেন। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সামসুল আলম সিদ্দিকীসহ বেশির ভাগ বাঙালি সেনা বাঙালি ইপিআর সেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে বেশির ভাগ পাকিস্তানি ইপিআর (উইং কমান্ডার কমর আব্বাসসহ) ও দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের পাকিস্তানি সেনা নিহত ও বাকিরা বন্দী হয়।
সামসুল আলম সিদ্দিকী প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রমবাড়ি সাবসেক্টরে, পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান