বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে নোয়াগাঁও গ্রামে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক ঘাঁটি। নোয়াগাঁও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। কুমিল্লা থেকে ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা কয়েক দিন পর পর সেখানে আসত। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ জনসাধারণকে সেখানে ডেকে এনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে সভা করত। মূল উদ্দেশ্য মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ড ঠেকানো।

এ এলাকা ছিল মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ সাবসেক্টরের অধীন। এ এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর একটি দলের দলনেতা ছিলেন আবদুল ওয়াহাব (বীর বিক্রম)। আর একটি দলের (মর্টার প্লাটুন) দলনেতা ছিলেন শামসুল হক। ১৭ জুলাই তাঁরা খবর পান পাকিস্তানিরা পরদিন নোয়াগাঁওয়ে আবার এমন সভার আয়োজন করেছে। এরপর তাঁরা দুই দল মিলে সেখানে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন।

১৮ জুলাই ভোরে শামসুল হক ও ওয়াহাব গোপন শিবির থেকে সহযোদ্ধাদের নিয়ে রওনা হন নোয়াগাঁওয়ের উদ্দেশে। সুবিধাজনক স্থানে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।

সভা শুরু হয় আনুমানিক বেলা ১১টা-সাড়ে ১১টার দিকে। শেষ হয় দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে। লোকজন চলে যায়। এরপর পাকিস্তানি দুই সেনা কর্মকর্তা স্কুলমাঠসংলগ্ন ওপিতে (অবজারভেশন পোস্ট) উঠে বাইনোকুলার দিয়ে সীমান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ শুরু করে। কিছুসংখ্যক সেনা এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকে।

এ সুযোগ হাতছাড়া করেননি শামসুল হক ও ওয়াহাব। একসঙ্গে গর্জে ওঠে শামসুল হকের কাছে থাকা তিন ইঞ্চি মর্টার এবং ওয়াহাবের কাছে থাকা এলএমজি। সঙ্গে সঙ্গে অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও তাঁদের নিজ নিজ অস্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করেন। নিমেষে শান্ত এলাকা গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে পড়ে।

পাকিস্তানি শিবিরে সবাই ছোটাছুটি শুরু করে। প্রকাশ্যে এমন আক্রমণ তারা কল্পনাও করেনি। শামসুল হকের ছোড়া মর্টারের গোলা নিখুঁত নিশানায় আঘাত করে ওপি এবং স্কুলঘরে। ওপিতে নিহত একজনের মৃতদেহ মাটিতে পড়ে থাকে। হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি।

সেদিন দুজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নিহত ও অনেকে আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সফল এক অপারেশন। শামসুল হক এ অপারেশনে যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

শামসুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ২৭ মার্চ বিদ্রোহকালে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তিনি প্রথমে ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে তাঁকে কে ফোর্সের অধীন নবগঠিত নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান