বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত অবস্থান নিলেন গাছপালা ও ঝোপঝাড়ের আড়ালে। মঙ্গল মিয়াসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা। অদূরে রেলস্টেশন। সেই রেলস্টেশনের দিকে আসছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরাট একটি দল। মুক্তিযোদ্ধারা অপেক্ষা করছেন। একসঙ্গে গর্জে উঠল মঙ্গল মিয়া ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অস্ত্র। লুটিয়ে পড়ল বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এ ঘটনা ঘটে মন্দভাগ রেলস্টেশনে ১৯৭১ সালের ১৮ জুন।

মন্দভাগ রেলস্টেশন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন ভারতীয় এলাকায় একটি ক্যাম্পে। সেদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান একদল পাকিস্তানি সেনা কসবা রেলস্টেশন থেকে রেলের একটি ট্রলিতে করে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও রেশন নিয়ে রওনা হয়েছে সালদা নদী রেলস্টেশনে। ট্রলির নিরাপত্তায় রয়েছে আরেক দল পাকিস্তানি সেনা। তারা সব মিলে প্রায় ২০০ জন।

খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করার। তাঁরা দ্রুত সীমান্ত অতিক্রম করে অবস্থান নেন মধ্যবর্তী মন্দভাগ স্টেশনের কাছে। তাঁরা ছিলেন ৪০ জন। দলের নেতৃত্বে সুবেদার আবদুল ওয়াহাব (বীর বিক্রম, পরে অনারারি ক্যাপ্টেন)। মঙ্গল মিয়া সহ-দলনেতা। তাঁদের অস্ত্র বলতে ছিল দুটি মেশিনগান, সাতটি এলএমজি, একটি দুই ইঞ্চি মর্টার ও একটি রকেট লঞ্চার। বাকি সব হালকা অস্ত্র।

পাকিস্তানি সেনারা রেলট্রলি মাঝে রেখে রেললাইনের দুই পাশ ধরে সারিবদ্ধভাবে হেঁটে আসছিল। রেললাইনের সমান্তরাল রাস্তায় ছিল আরেক দল পাকিস্তানি সেনা। রেলট্রলি ও সেনারা অ্যামবুশের মধ্যে ঢোকামাত্র মঙ্গল মিয়ারা একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে রকেট লঞ্চারের একটি গোলা ট্রলি ভেদ করে চলে যায়। গুলিবিদ্ধ কয়েকজন সেনা লুটিয়ে পড়ে।

পাকিস্তানি সেনারা রেললাইনের আড়ালে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। দুই পক্ষে প্রায় ঘণ্টা খানেক প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে মঙ্গল মিয়া অসীম বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন।

মঙ্গল মিয়া চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসে সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার কথা বলে তাঁদের সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে সালদা নদী, মন্দভাগ, কসবা এলাকায় গেরিলাযুদ্ধ করেন। তিনি কিংবদন্তির যোদ্ধা আবদুল ওহাবের নেতৃত্বাধীন কোম্পানিতে ছিলেন। একটি প্লাটুনের নেতৃত্ব দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান