বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিক। টাঙ্গাইলে যমুনা নদীতীরবর্তী এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন দলনেতা খবর পেলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে কয়েকটি জলযান রংপুরে যাচ্ছে। তাতে অনেক অস্ত্রশস্ত্র আছে। প্রতিটি জলযানেই আছে পাকিস্তানি সেনা। তারা পাহারায় নিযুক্ত।

ফজলুল হকের দলসহ অন্য দলের যোদ্ধারা প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান নিলেন মাটিকাটায়। তাঁদের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন হাবিবুর রহমান। টাঙ্গাইল জেলার ভুঞাপুরের দক্ষিণের একটি গ্রাম মাটিকাটা। এর পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী।

১১ আগস্ট বেলা আনুমানিক ১১টা। এ সময় জলযানগুলো চলে এল মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কাছাকাছি। তাঁরা অবস্থান নিয়েছেন নদীর পূর্ব পাড়ে। জলযানগুলো সেই পাড়ের পাশ দিয়েই এগিয়ে আসছে। নদীর পাড় থেকে একটু দূরে চর। জলযানগুলো নদীর পাড় ও চরের মাঝ দিয়েই যাবে।

হাবিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের বলেছেন, তিনি সংকেত দেবেন। তার আগে যেন কেউ গুলি না ছোড়ে। তাই ফজলুল হক ও অন্যরা অস্ত্রের ট্রিগারে আঙুল রেখে চুপচাপ আছেন। সময় এগিয়ে যেতে থাকে। এর মধ্যে দুটি জলযান তাঁদের সামনে দিয়ে চলে গেল। সবাই অধীর উত্তেজনায়। কিন্তু সংকেত আসছে না। এ সময় বড় আকারের দুটি জলযান তাঁদের সামনে এল। মুক্তিযোদ্ধারা দেখলেন, তাতে মেশিনগান ফিট করা। কিন্তু সেখানে কোনো পাকিস্তানি সেনা নেই। তারা ডেকে শিথিল অবস্থায় গল্পগুজব করছে। মৃত্যু যে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তা তাদের কল্পনাতেও নেই।

ঠিক তখনই সংকেত এল। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল ফজলুল হকসহ সবার অস্ত্র। মর্টার, এলএমজি, রাইফেলের গুলিবর্ষণ। একের পর এক রকেট লঞ্চারের রকেট পড়তে থাকল কেবিন ও ডেকে। হতাহত হলো পাকিস্তানি সেনাসহ কয়েকজন। বাকিরা প্রতিরোধের চেষ্টা না করে স্পিডবোটে চড়ে পালিয়ে গেল। পেছনে ছিল আরও তিনটি জলযান। সেগুলো গোলাগুলির শব্দ শুনে মুখ ঘুরিয়ে পেছন দিকে চলে গেল।

আক্রান্ত জলযানে ছিল অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের বাক্স। মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামবাসী ও স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় অর্ধেক বাক্স নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হন। এরপর তাঁরা জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে বাকি অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ধ্বংস হয়ে যায়।

১৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মাটিকাটায় বিমান হামলা চালায়। তখন ফজলুল হক আহত হন।

ফজলুল হক ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার অনেক জায়গায় তিনি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান