বিজ্ঞাপন
default-image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে সিলেট অভিমুখী সড়ক ধরে ৩০ কিলোমিটার গেলেই মাধবপুর। সেখান থেকেই হবিগঞ্জ জেলার শুরু। ১৯৭১ সালের ২৭-২৮ এপ্রিল এখানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সংঘটিত হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। রক্তক্ষয়ী এই সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একদল সেনাসদস্য। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন নাসিমের (পরে লে. জেনারেল ও সেনাপ্রধান) কোম্পানিতে ছিলেন মো. নূরুল আজিম চৌধুরী।

পাকিস্তানি সেনারা বিপুল শক্তি নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা কামানের মুহুর্মুহু গোলা ও বিস্ফোরক নিক্ষেপ করতে করতে মুক্তিবাহিনীকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। নূরুল আজিম চৌধুরী ও তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁদের বাংকার ও পরিখার মধ্য থেকে রিকোয়েললেস রাইফেল, মেশিনগান, হালকা মেশিনগান, মর্টার, রাইফেল প্রভৃতি অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় হাতাহাতি যুদ্ধ। এ পর্যায়ে মো. নূরুল আজিম চৌধুরী ও তাঁর সহযোদ্ধারা অসীম সাহস ও দৃষ্টান্তমূলক দৃঢ়তার পরিচয় দেন। এ যুদ্ধে তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা পেশাগত দক্ষতা, নৈপুণ্য, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

নূরুল আজিম চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডো ও প্যারাট্রুপার। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তখন তাঁর ইউনিটের অবস্থান ছিল টাঙ্গাইলে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। জুলাই পর্যন্ত তিনি তেলিয়াপাড়ায় ছিলেন। এরপর তিনি নরসিংদী জেলার বেলাব, রায়পুরাসহ কিশোরগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলায় যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীন নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গেরিলাযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনীর গণযোদ্ধাদের পাশাপাশি নিয়মিত সেনাদেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগস্টে তিনি এ দায়িত্ব পান। এর আগে এ দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আবুল বশর। তিনি ১৪ জুলাই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সংঘটিত এক যুদ্ধে শহীদ হন। এই এলাকায় নূরুল আজিম চৌধুরীর প্রথম অপারেশন ছিল নরসিংদীর একটি বিদ্যুেকন্দ্রে। পরে ঢাকা-নরসিংদী সড়কের অনেক সেতু তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ধ্বংস করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান