বিজ্ঞাপন
default-image

তীব্র শীত, অন্ধকার ও কুয়াশা উপেক্ষা করে একদল মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে চলেছেন। একটি উপদলের নেতৃত্বে আবদুল হালিম। নির্ধারিত সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে শুরু হয় গোলাবর্ষণ। গোলা আসে পেছন থেকে। ভারতীয় গোলন্দাজ ব্যাটারি সীমান্ত থেকে কামানের গোলাবর্ষণ করে।

গোলাবর্ষণ শেষ হওয়ার পর আবদুল হালিম এবং তাঁর সহযোদ্ধারা আবার এগিয়ে যান। তাঁদের লক্ষ্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি দখল করা। গোলাবর্ষণে পাকিস্তানি সেনারা ভীতসন্ত্রস্ত। এ সুযোগে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানিদের ওপর।

নিমেষে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় মেশিনগান, এলএমজি আর রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি। আবদুল হালিমসহ অন্যান্য দলের মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তাঁদের সবার বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষায় ফাটল ধরে। হতোদ্যম পাকিস্তানিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এরপর মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে এগিয়ে যান মূল ঘাঁটি অভিমুখে। পাকিস্তানি সেনারা মজবুত বাংকার ও নিরাপদ প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তুমুল গুলিবর্ষণ করে। এতে বিচলিত হননি আবদুল হালিম। সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঢুকে পড়েন মূল প্রতিরক্ষার ভেতর। সকালের মধ্যে তাঁরা আরও কিছু এলাকা দখল করে ফেলেন।

এরপর হঠাত্ যুদ্ধের গতি পাল্টে যায়। পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত তাদের দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনে সমবেত হয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানিদের দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইন ছিল বেশ নিরাপদ। সেখান থেকে পুনরায় সংগঠিত পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক গোলাগুলি শুরু করে। এ আক্রমণ ছিল বেশ জোরালো। গুলি ও বোমার আঘাতে শহীদ ও আহত হন আবদুল হালিমের দলের কয়েকজনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা।

আবদুল হালিম ও তাঁর সহযোদ্ধারা এতে মনোবল হারাননি। দমেও যাননি। সাহসের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ করেন। তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে হঠাত্ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া একঝাঁক গুলির দু-তিনটি লাগে তাঁর বুকে। নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২২-২৩ নভেম্বরের। ঘটেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ায়। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমসহ প্রায় ২২ জন শহীদ হন। পরে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে চন্দ্রপুরের অদূরে সমাহিত করা হয়।

আবদুল হালিম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর প্রথমে দুই নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে তাঁকে কে ফোর্সের অধীন নবগঠিত নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান