বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের নভেম্বরে কানাইঘাট দখল করার পর আবদুল আজিজ ও তাঁর সহযোদ্ধারা রওনা হন সিলেট শহর অভিমুখে। তাঁরা ছিলেন কয়েকটি দলে (কোম্পানি) বিভক্ত। তাঁদের দলনেতা ছিলেন ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (বীর বিক্রম, পরে মেজর)।

যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী আবদুল আজিজসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটির মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে অ্যাডভান্স টু কন্টাক্ট পদ্ধতিতে এগিয়ে যান। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা কানাইঘাট থেকে সিলেট অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। মাঝেমধ্যে একটু বিশ্রাম নিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর একটি চা-বাগানে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক রাতের বেলা একটি টহলদলকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গতিবিধির খোঁজখবর নিতে পাঠান। খোঁজখবর পাওয়ার পর তাঁর নির্দেশে আবদুল আজিজ ও তাঁর সহযোদ্ধারা সকালবেলা সামনে অগ্রসর হন। পথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের বাধা দেয়। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তাঁরা কতক্ষণ অপেক্ষা করেন। সন্ধ্যায় তাঁরা এমসি কলেজ অভিমুখে পুনরায় যাত্রা করেন। পরদিন ভোর চারটার সময় এমসি কলেজের কাছে টিলার ওপর অবস্থান নেন। অদূরেই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ও ঘাঁটি।

একটু পর সকাল হয়। মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পান, পাকিস্তানি সেনারা তাদের ডিফেন্সের মধ্যে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি সম্পর্কে তারা তেমন সজাগ ছিল না। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য দলও সেখানে এসে অবস্থান নেয়।

এদিকে অনেক পাকিস্তানি সেনা একসঙ্গে দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের অধিনায়ক নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। তাঁর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের আক্রমণ শুরু করেন। ছয়টা মেশিনগান তিন দিক থেকে ফায়ার শুরু করে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে।

এরপর সেখানে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আবদুল আজিজ ও তাঁর সহযোদ্ধারা ১৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটানা যুদ্ধ করেন। তারপর পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে।

আবদুল আজিজ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ আক্রান্ত হওয়ার পর ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ১১ নম্বর সেক্টরে, পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। কামালপুর যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান