একদল প্রতিরোধযোদ্ধা অবস্থান নিয়েছেন ঢাকার অদূরে। ক্ষুদ্র একটি দল নিয়ে কাছাকাছিই ছিলেন সুলতান আহমেদ। তাঁরা সবাই ইপিআর সদস্য। তিনি তাঁর দল নিয়ে যোগ দিলেন তাঁদের সঙ্গে। এরপর অবস্থান নিলেন ডাঙ্গা নামের জায়গায়। পরদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের অবস্থানের কাছে আসামাত্র তাঁরা আক্রমণ চালালেন। নিহত হলো অনেক পাকিস্তানি সেনা। পাল্টাপাল্টি আক্রমণের একপর্যায়ে চারদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের প্রায় ঘেরাও করে ফেললেন তাঁরা। বিপৎসংকুল হয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনাদের পশ্চাদপসরণ। শেষে আর্টিলারি ফায়ারের সাহায্য নিয়ে তারা পালিয়ে গেল।
এ ঘটনা ১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের। ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ময়মনসিংহের ২ নম্বর ইপিআর উইংয়ের দুই কোম্পানি ইপিআর সদস্য নরসিংদীর পাঁচদোনায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। সুলতান আহমেদ তাঁর দল নিয়ে সেখানে ১ এপ্রিল যোগ দেন। তাঁরা অবস্থান নেন পাঁচদোনার চার মাইল পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পারে ডাঙ্গা নামের জায়গায়।
পরদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল ঢাকা থেকে নরসিংদী যাচ্ছিল। সুলতান আহমেদ তাঁর ক্ষুদ্র দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান। এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই দলকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলেন। ফলে পাকিস্তানি সেনারা পশ্চাদপসরণ করতে পারছিল না। এরপর পাকিস্তানি সেনাদের নতুন দল এসে ব্যাপক আর্টিলারি গোলাবর্ষণ করতে থাকে। তার পরও মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ঘেরাও করে রাখেন। যুদ্ধ চলতে থাকে। পরদিন পাকিস্তানি বিমান থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এর মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা আরও কয়েক দিন তাঁদের অবস্থান ধরে রাখেন। ১১ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন দল বিমানবাহিনীর সহায়তা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। কয়েক দিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ কমে এসেছিল। কয়েকটি প্রতিরক্ষা অবস্থান একদম গুলিশূন্য হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় তাঁরা পশ্চাদপসরণ করে মাধবপুরে সমবেত হন।
সুলতান আহমেদ চাকরি করতেন ইপিআরে। নায়েব সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২২ বালুচ রেজিমেন্ট তাঁদের আক্রমণ করে। ঘুমন্ত অবস্থায় ইপিআরের অনেক সদস্য শহীদ হন। অনেকে আটক হন। সুলতান আহমেদসহ কয়েকজন বেঁচে যান। তাঁরা পিলখানা থেকে বেরিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে নিরাপদ স্থানে সমবেত হন। এরপর নরসিংদীর পাঁচদোনায় যান। সেখানে অবস্থানকালে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে ৩ নম্বর সেক্টর ও নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। মাধবপুর, আখাউড়া, আশুগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে সুলতান আহমেদ যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান