বিজ্ঞাপন
default-image

টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে দক্ষিণে নাগরপুর উপজেলা। এর পরই মানিকগঞ্জ জেলার সীমানা শুরু। মুক্তিযুদ্ধকালে নাগরপুরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা বারবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করেও জয়ী হতে পারেননি।

নভেম্বরের শেষে মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নিলেন, কয়েকটি দল মিলে সেখানে আক্রমণ করবেন। এ জন্য সাইদুর রহমান, মালেক ও খোকার নেতৃত্বাধীন দলের বাছাই করা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হলো। আক্রমণের তারিখ নির্ধারিত হলো ৩০ নভেম্বর।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত দল নির্ধারিত দিন সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে একযোগে আক্রমণ শুরু করলেন। সাইদুর রহমান দুঃসাহসের সঙ্গে সহযোদ্ধাদের নিয়ে গুলি করতে করতে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার খুব কাছে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে পাকিস্তানি অবস্থানে প্রচণ্ডভাবে গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। মর্টার, এলএমজি ও রকেটের কর্ণবিদারী শব্দে আশপাশ এলাকা কেঁপে উঠতে থাকে।

পাকিস্তানি সেনাদের দলে ছিল এক কোম্পানি মিলিশিয়া ও শতাধিক রাজাকার। তারা সুরক্ষিত বাংকার থেকে পাল্টা আক্রমণ করে। বাংকারগুলো ছিল মাটির নিচে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের দুটি বাংকার ধ্বংস করলেন। কিন্তু তাতেও তারা কাবু হলো না। সারা দিন ধরে গোলাগুলি চলল। ক্রমে রাত নেমে এল। বিক্ষিপ্তভাবে গোলাগুলি চলল রাতেও।

পরের দিন সকালে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন উদ্যমে আক্রমণ শুরু করলেন। উপর্যুপরি আক্রমণে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান ভেঙে পড়ার উপক্রম। তখন আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটা। এ সময় সংবাদ এল একদল পাকিস্তানি সেনা টাঙ্গাইল থেকে নাগরপুরে আসছে।

সাইদুর রহমান এতে বিচলিত হলেন না। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। তাঁদের সাঁড়াশি আক্রমণে হতাহত হলো বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও তাদের সহযোগী রাজাকার। এর মধ্যে সেখানে হাজির হলো পাকিস্তানি সেনাদের নতুন দল। তারা ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এ অবস্থায় সাইদুর রহমানকে সহযোদ্ধাদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম)। তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পিছু হটে নিরাপদ স্থানে চলে যান।

সাইদুর রহমান ১৯৭১ সালে এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি দেশের অভ্যন্তরে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। বল্লা, ঘাটাইলের মাকড়াই, ভুঞাপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেন। বল্লার যুদ্ধে নিহত পাকিস্তানি সেনাদের মৃতদেহ পাকিস্তানি সেনারা উদ্ধার করার চেষ্টা করে। তখন তিনি তাঁর দল নিয়ে তা নস্যাত্ করে দেন। যুদ্ধ চলা অবস্থায় তিনি ও তাঁর চার সহযোদ্ধা নদী সাঁতরে নিহত পাকিস্তানি সেনাদের মৃতদেহ নিজেদের অবস্থানে নিয়ে আসেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান