বিজ্ঞাপন
default-image

গোলাগুলির শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। বৃষ্টির মতো শত শত গুলি ধেয়ে আসছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে। গোলাও এসে পড়ছে বিরামবিহীন। শফিকুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা ভীতসন্ত্রস্ত হলেন না। অধিনায়কের নির্দেশ পেয়ে গোলাগুলি উপেক্ষা করে সাহসের সঙ্গে তাঁরা এগিয়ে যেতে লাগলেন সামনের দিকে। ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহের ভেতরে। এ সময় হঠাত্ একটি গোলা এসে পড়ল শফিকুর রহমানের পাশে। বিস্ফোরিত গোলার বড় এক স্প্লিন্টার আঘাত করল তাঁর বাঁ হাতে। নিমেষে উড়ে গেল তাঁর হাতের সামনের অংশ। এ ঘটনা ঘটে কামালপুরে ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই।

জামালপুর জেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে কামালপুরের অবস্থান। সেদিন মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমদের বয়ানে কামালপুর যুদ্ধের বিবরণ আছে। তাতে তিনি বলেন, ‘৩১ জুলাই ভোর সাড়ে তিনটার সময় দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমরা কামালপুর বর্ডার আউট পোস্টে আক্রমণ করি। এফইউপিতে পৌঁছানোর পূর্বেই আমাদের পক্ষ থেকে আর্টিলারির গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের এফইউপিতে পৌঁছার পরই আর্টিলারি ব্যবহার করার কথা ছিল। এতে মুক্তিযোদ্ধারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন।

‘এ সময়ে শত্রুপক্ষও আর্টিলারি ও ভারী মর্টারের সাহায্যে গোলাগুলি শুরু করে। তা সত্ত্বেও আমি ও সালাহউদ্দীন আমাদের কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের একত্র করে শত্রুদের আক্রমণ করি ও সামনে অগ্রসর হই। কাঁটাতার এবং মাইন ফিল্ড অতিক্রম করে শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষার অর্ধেক জায়গা দখল করে নিই। শত্রুরা পেছন দিকে হটে যায়।

‘এই আক্রমণ ও যুদ্ধে আমাদের পক্ষে একজন অফিসারসহ ৩১ জন যোদ্ধা শহীদ ও দুজন জুনিয়র কমিশন অফিসারসহ ৬৫ জন আহত হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, শত্রুপক্ষের ৫০ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়। ওই আক্রমণ যদিও পুরোপুরি সফল হয়নি, তবু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটা একটা স্মরণীয় আক্রমণ ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাঁটাতারের ঘের ও মাইন ফিল্ড উপেক্ষা করে আমাদের যোদ্ধারা যেভাবে অসীম সাহসিকতায় সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন, তা থেকে প্রমাণিত হয় তাঁরাও অসীম বীরত্বের অধিকারী।’

শফিকুর রহমান ওই যুদ্ধে আহত হওয়ার পর সহযোদ্ধারা তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেন ফিল্ড হাসপাতালে। পরে ভারতে তাঁর চিকিত্সা হয়।

শফিকুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন তিনি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান