বিজ্ঞাপন
default-image

সিলেট শহরের উপকণ্ঠে এমসি কলেজ। কলেজের উত্তর দিকে বেশ কয়েকটি টিলা। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। শীতকালের সকাল। তখন ওই টিলাগুলোর ওপর এলেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা ও গণবাহিনীর সদস্য। রুহুল আমিন এ বাহিনীরই একজন হাবিলদার।

মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে ৫০০ গজ দূরেই পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক, মাথায় পরা স্টিলের হেলমেট, অস্ত্রশস্ত্র দেখতে হুবহু পাকিস্তানি সেনাদের মতো ছিল। ফলে পাকিস্তানি সেনারা চিন্তাই করতে পারেনি যে তাঁরা মুক্তিবাহিনীর সদস্য।

পাকিস্তানি সেনাদের চোখের সামনেই মুক্তিযোদ্ধারা পরিখা খুঁড়ে পজিশন নিতে থাকেন। হঠাৎ মুক্তিবাহিনীর ডেলটা কোম্পানির অবস্থানের সামনের রাস্তায় পাকিস্তানি বাহিনীর দুটি জিপের কনভয় আসে। মুক্তিযোদ্ধারা জিপ দুটির ওপর আক্রমণ চালান। এতে প্রায় ২৫ জন পাকিস্তানি সেনা তাত্ক্ষণিকভাবে হতাহত হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ।

দুপুরে পাকিস্তানি সেনারা মরিয়া হয়ে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে মুক্তিবাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। লড়াইয়ের একপর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর মর্টারের গোলা শেষ হয়ে যায়। তখন রুহুল আমিনসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সাহসী ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে হালকা মেশিনগান ও রাইফেল দিয়েই দৃঢ়তার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করেন। তাঁদের সাহস, মনোবল, বীরত্ব ও রণকৌশলের কাছে পাকিস্তানি বাহিনী শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়। সেদিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৮০ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর ২০ জন শহীদ ও ২১-২২ জন আহত হন। রুহুল আমিনও এ যুদ্ধে আহত হন।

শুধু এখানেই নয়, রুহুল আমিন সিলেট এমসি কলেজ, আটগ্রাম, ৩০-৩১ জুলাই জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরে সংঘটিত যুদ্ধের সক্রিয় অংশীদার ছিলেন। কামালপুরের প্রচণ্ড যুদ্ধেও তিনি সামনের সারির সেনা ছিলেন।

রুহুল আমিন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হাবিলদার ছিলেন। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। মার্চের শুরু থেকে তাদের কিছুসংখ্যক সেনা শীতকালীন প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা ২৯ মার্চ গভীর রাতে সেনানিবাসে ফিরে আসেন এবং এর এক দিন পর, অর্থাৎ ৩০ মার্চ বিদ্রোহ করেন। পরে তাঁরা চৌগাছায় সমবেত হন। ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে এরপর যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান