বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিবাহিনীর ৩ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হতে থাকলেন চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য। একটি দলে আছেন মোবারক হুসেন মিয়া। আক্রমণের নির্ধারিত সময় ১ ডিসেম্বর মধ্যরাত। লক্ষ্যবস্তু আখাউড়া ও সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহ।

মোবারক হুসেনের দলের (কোম্পানি) অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল)। তাঁর অধীনে আছে আরও একটি দল। ৩০ নভেম্বর সকালে তিনি জরুরি খবর পেয়ে চলে যান সিংগারবিলের মুক্তিযোদ্ধা অবস্থানে। সেদিন বা পরদিনও তিনি ফিরে এলেন না। আক্রমণের নতুন পরিকল্পনার কারণে তাঁকে সেখানে থেকে যেতে হয়। সেখানে যুদ্ধে নেতৃত্বদানের দায়িত্ব পড়ে তাঁর ওপর। এ খবর মোবারক হুসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাননি।

ক্রমে আক্রমণের সময় ঘনিয়ে এল। মোবারক হুসেন তাঁর অধিনায়কের জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। শেষে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে তাঁর কাছে থাকা ভেরি লাইট পিস্তল দিয়ে নির্ধারিত সময় সংকেত দিলেন। সংকেত পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সামনে রওনা হলেন। এদিকে আগেই নির্ধারিত ছিল, আক্রমণ শুরু করার আগে ভারতীয় গোলন্দাজ দল দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করবে।

১১টা ৪৫ মিনিটে গোলাবর্ষণ শুরু হলো। এই অবস্থায় তাঁরা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন। পাকিস্তানি বাহিনীও পাল্টা গোলাবর্ষণ শুরু করল। এর তীব্রতা এমন যে অনেক দূরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠল। নির্ধারিত সময় ভারত থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে গোলাবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। এরপর দুই পক্ষে শুরু হয়ে গেল রাইফেল, মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্রের অবিরাম গোলাগুলি। এইভাবে ঘণ্টা খানেক যুদ্ধ চলল।

এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ ও গুরুতর আহত হলেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। মোবারক হুসেন বিচলিত না হয়ে সামনে এগোতে থাকেন। তাঁকে দেখে তাঁর সহযোদ্ধারাও অনুপ্রাণিত হলেন। বীরত্বের সঙ্গে তাঁরা যুদ্ধ করে চললেন। গোলাগুলির একপর্যায়ে হঠাত্ তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালিতে গুলি লাগে। পরে এক সহযোদ্ধার সহযোগিতায় প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়ে পুনরায় যুদ্ধে যোগ দেন। এই যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

মোবারক হুসেন মিয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে প্রশিক্ষক হিসেবে প্রেষণে ইপিআরে কর্মরত ছিলেন। ডিসেম্বরে তিন মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। এ সময় পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ক্রমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার পরও তিনি আর পাকিস্তানে যাননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান