বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলার ঘুঘুমারীতে প্রায় দেড় শ মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হলেন। তাঁরা পাঁচটি দলে বিভক্ত। একটি দলের নেতৃত্বে মোদাসসের হোসেন খান। তাঁরা কয়েক মাইল প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে উলিপুরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অপারেশন করবেন। এর মধ্যে উলিপুর শহরের অপারেশনটি ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ কাজের নেতৃত্ব ও দায়িত্ব পড়েছে মোদাসসের হোসেন খানের ওপর। তাঁর দলে রয়েছেন দুই প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা। এক প্লাটুন আক্রমণ করবে রাজাকার ক্যাম্প, অন্যটি ডাকবাংলোয় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের। তিনি নিজে থাকবেন প্রথম দলের সঙ্গে।

তখন বর্ষা। ভরা ব্রহ্মপুত্র উত্তাল। বিকেল পাঁচটার দিকে মোদাসসের হোসেন খান সহযোদ্ধাদের নিয়ে নৌকাযোগে রওনা হলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পৌঁছালেন তাঁরা নদীর ওপারে। নৌকা থেকে নেমে অন্ধকারে এগিয়ে গিয়ে দ্রুত অবস্থান নিলেন নির্দিষ্ট স্থানে। প্রথমে তাঁরা রকেট লাঞ্চার থেকে শেল ছুড়লেন। রাতের নিস্তব্ধতার বুক চিরে নিক্ষিপ্ত শেল বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল কয়েক মাইল দূর থেকেও।

কিছুক্ষণ যুদ্ধ করার পর তাঁরা সবাই রওনা হলেন ফরওয়ার্ড অ্যাসেম্বলি এরিয়ায়। তখনই ঘটল বিপত্তি। একদল পাকিস্তানি সেনা পথে তাঁদের পেছন থেকে আক্রমণ করল। মোদাসসের হোসেন খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা এই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। গোলাগুলির একপর্যায়ে তিনি দেখতে পান, তাঁরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁর সঙ্গে মাত্র সাত-আটজন রয়েছেন। তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, সবার ধরা পড়ার মতো অবস্থা। সবার অস্ত্রের গুলিও প্রায় শেষ। আছে শুধু হ্যান্ড গ্রেনেড। তিনি হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে লাগলেন। হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়তে লাগলেন তাঁর সহযোদ্ধারাও। সেদিন অল্পের জন্য তাঁরা ধরা পড়েননি। এরপর তাঁরা দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে যান। পরে দলের অন্য সদস্যরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

মোদাসসের হোসেন খান ১৯৭১ সালে ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ২৩ মে তিনি পালিয়ে ভারতে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যুদ্ধ করেন ১১ নম্বর সেক্টরে এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। উলিপুর ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ নকশি বিওপি ও ধামাই চা-বাগান আক্রমণ।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান