বিজ্ঞাপন
default-image

মো. আবদুস শুকুরসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা নিঃশব্দে অবস্থান নিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পিঠে ও মাথায় কেমোফ্লেজ হিসেবে বাঁধা ধানের খড়, পাতাসহ ছোট ছোট ডাল। মো. আবদুস শুকুর একটি ছোট দলের নেতৃত্বে। তাঁদের কাছে আছে মর্টার।

মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার তিন দিক ঘিরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। মো. আবদুস শুকুরের দল অগ্রবর্তী। তাঁরা মর্টার ছোড়ার পর পেছনে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। সময় গড়াতে থাকল। আক্রমণের নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসতে থাকল।

নির্ধারিত সময়েই সেই সংকেত এল। যুদ্ধক্ষেত্রের অধিনায়কের সংকেত পাওয়ামাত্র মো. আবদুস শুকুরের দলের মর্টারগুলো গর্জে উঠল। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে একের পর এক মর্টারের গোলা ছুড়লেন। নিখুঁত নিশানায় সেগুলো পাকিস্তানি অবস্থানে পড়ল। বেশির ভাগই আঘাত হানল সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে। একই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মেশিনগান থেকে গুলি শুরু হয়েছে। মর্টার, মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্রের গোলাগুলিতে সেখানকার আকাশ আলোকিত।

পাকিস্তানি সেনাদের দিক থেকে তেমন প্রত্যুত্তর এল না। মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝতে অসুবিধা হলো না, মর্টারের আঘাতে ওদের প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়েছে। এরপর তাঁরা ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনারা অবস্থা বেগতিক দেখে পেছনে হটতে থাকল। এ ঘটনা ঘটে সিলেট জেলার গোবিন্দগঞ্জে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে।

মো. আবদুস শুকুর চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের অধীন ৮ নম্বর উইংয়ে। এই উইংয়ের একটি কোম্পানির অবস্থান ছিল বাসুদেবপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল সুবেদার। তিনি ওই কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন তিনি। প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মো. আবদুস শুকুর ২৮ মার্চ সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিদ্রোহ করে পরদিন রাতে ফুলবাড়ী-দিনাজপুর সড়কে অবস্থান নেন। এর আগেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল ফুলবাড়ীতে আক্রমণ করে। আক্রমণ শেষে সেনাদের পার্বতীপুরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পথ ভুলে তারা দিনাজপুরের দিকেই রওনা হয়। তখন তিনি তাদের আক্রমণ করেন। রাত ১০টা থেকে সকাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়।

মো. আবদুস শুকুর প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে তিনি নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। তাঁকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ, দেওয়ানগঞ্জ, সিলেট জেলার ছাতক, সালুটিকর, টেংরাটিলাসহ আরও কয়েকটি জায়গায় তিনি সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান