বিজ্ঞাপন
default-image

মু শামসুল আলম ১৯৭১ সালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৮ মার্চ তিনি একদল প্রতিরোধযোদ্ধা নিয়ে রাজশাহীর নন্দনগাছি সেতুর কাছে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে দুই দিন যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে তাঁদের হাতে সব পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

পরবর্তী সময়ে রাজশাহী শহর মুক্ত করার জন্য প্রতিরোধযোদ্ধারা ৩ এপ্রিল ভোরে রাজশাহী সেনানিবাস আক্রমণ করেন। মু শামসুল আলম সেই আক্রমণে অগ্রবর্তী দলের সর্বাগ্রে স্কাউট হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন। রাজশাহী শহর মুক্ত হয় এবং প্রতিরোধযোদ্ধারা ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সেনাদের ঘিরে ফেলেন। যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

১০ এপ্রিল ঢাকা থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন সেনা রাজশাহীর পথে অগ্রসর হচ্ছিল। ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদের (বীর প্রতীক) নির্দেশে মু শামসুল আলম ও আবু বকর সিদ্দিক (বীর বিক্রম) মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নিয়ে পাকিস্তানিদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে অগ্রসর হন। তাঁরা বনপাড়া-ঝলমলিয়া পর্যন্ত শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু কেবল ৩০৩ রাইফেল ও এলএমজি দিয়ে তাঁদের পক্ষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা রোধ করা সম্ভব হয়নি। ঝলমলিয়া সেতুর কাছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কিছু প্রতিরোধযোদ্ধা আহত হন। ১২ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চারঘাট ও সারদা দখল করে। প্রতিরোধযুদ্ধে সহযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক শহীদ হন। মু শামসুল আলম অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। এরপর তিনি ভারতে যান। নন্দীরভিটা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকাকালে রাজশাহী অঞ্চলে কয়েকটি গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন।

মু শামসুল আলম অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে ১১ নম্বর সেক্টরে সাবসেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এবং বাহাদুরাবাদ, দেওয়ানগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী মুক্ত এলাকায় প্রতিরক্ষাবূহ্য গড়ে তোলেন। নভেম্বরের নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডোদের নিয়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধাভিযানে তাঁরা নিজেদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন এবং সব ফেরি ও জেনারেটর ধ্বংস করেন। এই অভিযানের ফলে বাহাদুরাবাদ দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে পাকিস্তানিদের যাতায়াত ও রসদ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেওয়ানগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ অঞ্চল থেকে পশ্চাদপসরণ করে।

মু শামসুল আলম পরবর্তী সময়ে দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর রেলপথ ধরে তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জামালপুর শহরাভিমুখে অগ্রসর হয়ে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে জামালপুর আক্রমণে অংশ নেন। জামালপুরে পাঁচ দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান