বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের সিও কার্যালয়ে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। তখন সিও কার্যালয় ছিল বারৈখালীতে। পাকিস্তানি ক্যাম্পে ছিল নিয়মিত সেনা, ইপিআর, ইপিসিএএফ ও রাজাকার। সব মিলিয়ে ১০০ লোকবলের মিশ্র বাহিনী। ইপিআরে বেশির ভাগ ছিল বাঙালি।

অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি মাহফুজুর রহমান খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা হরিরামপুরের বারৈখালীতে আক্রমণ করেন। এর আগে মুক্তিযোদ্ধারা গোপনে পাকিস্তানি ক্যাম্পের ইপিআরের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এরপর লাল মিয়া নামের ইপিআরের একজন প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাঁদের জানান, বাঙালি ইপিআর সবাই সাহায্য করতে রাজি। মুক্তিযোদ্ধারা যখন আক্রমণ করবেন, তখন তাঁরা পক্ষ ত্যাগ করে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন ও আক্রমণে অংশ নেবেন।

এরপর আক্রমণের তারিখ ঠিক করা হয়। দিন নির্ধারিত হয় ১৩ (কারও কারও মতে ১৬) অক্টোবর। সেদিন বিকেল চারটার দিকে ওয়্যারলেস অফিস থেকে কাঠের সেতু এলাকার মধ্যে রাস্তার পূর্ব পাশে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন মাহফুজুর রহমান খানসহ প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের অস্ত্র ছিল খুবই সাধারণ—এসএলআর, রাইফেল ও গ্রেনেড। যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন।

ওয়্যারলেস অফিসের ছাদের ওপর ছিল পাকিস্তানি সেনাদের দুটি এলএমজি পোস্ট। এলএমজি চালনার দায়িত্বে ছিলেন দুই পাঠান সেনা। যুদ্ধ শুরু হলে আশ্চর্যজনকভাবে ওই দুই পাঠান সেনা তাঁদের এলএমজি দিয়ে গুলি করা থেকে বিরত থাকেন। পরে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণও করেন। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ সুবিধা হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। মুখোমুখি যুদ্ধের একপর্যায়ে ওয়্যারলেস স্টেশনে থাকা পাকিস্তানি সেনারা সিও অফিসের মূল ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। তখন মাহফুজুর রহমান খানসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ওয়্যারলেস অফিস ধ্বংস করতে যান। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা সেখানে গ্রেনেড ছোড়ে। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলে আগুন ধরে যায়। আগুনে ঝলসে যান মাহফুজুর রহমান খান ও বজলুর হুদা ওরফে পান্নু। মাহফুজুর রহমান খানের জখম গুরুতর ছিল। চিকিত্সকের কাছে পাঠানোর আগেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। বজলুর হুদা বেঁচে যান।

মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭১ সালে জয়দেবপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ছিলেন। শ্রমিক রাজনীতিও করতেন। মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। সেখানে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরে। পরে নিজ এলাকা মানিকগঞ্জে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান