বিজ্ঞাপন
default-image

জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ওই রাতেই তিনি বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

২৭ ও ২৮ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ ঘোষণা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার মনে দারুণ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।

জিয়াউর রহমান প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ১ নম্বর সেক্টর, পরে ১১ নম্বর সেক্টর এলাকার অধিনায়ক এবং পরবর্তীকালে জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সার্বিক নেতৃত্ব ও পরিচালনায় বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধগুলোর মধ্যে রয়েছে কামালপুর, ছাতক, ধলই বিওপি ও রাধানগরের যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি সিলেট এলাকায় ছিলেন।

২৫ মার্চ রাত ১১টায় অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়া (পাকিস্তানি) জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে যাওয়ার পথে রাস্তায় ছিল বেশ কিছু ব্যারিকেড। আগ্রাবাদে একটি বড় ব্যারিকেডের কারণে তাঁর ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে। এ সময় পেছন থেকে ছুটে আসে একটি ডজ গাড়ি। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী ওই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে যান জিয়াউর রহমানের কাছে। হাত ধরে তাঁকে টেনে নিয়ে যান রাস্তার পাশে। তিনি জিয়াকে জানান, পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে। শহরের বহু লোক হতাহত। তাঁর উত্তেজিত কণ্ঠস্বরে প্রশ্ন, ‘জিয়া ভাই, এখন কী করবেন?’ খালেকুজ্জামানের কথা শুনে জিয়া বলে ওঠেন, ‘উই রিভোল্ট।’

জিয়াউর রহমান ফিরে যান ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে। সেখানে পৌঁছেই সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তা ও নৌসেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। হকচকিত পাকিস্তানি সেনাদের সবাই আত্মসমর্পণ করে। এরপর তিনি একাই একটি গাড়ি নিয়ে ছুটে যান কমান্ডিং অফিসার জানজুয়ার বাড়িতে।

কলবেলের শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠে আসেন জানজুয়া। দরজায় জিয়াউর রহমানকে দেখে চমকে ওঠেন। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী ততক্ষণে জিয়া বন্দরে বন্দী থাকার কথা। জানজুয়াকে আটক করে ষোলশহরে নিয়ে যান জিয়া।

এরপর জিয়া টেলিফোনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁদের কাউকে না পেয়ে তিনি ফোন করেন টেলিফোন এক্সচেঞ্জে। সবাইকে ফোন করে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের বিদ্রোহ ঘোষণার কথা জানাতে বলেন অপারেটরকে। অপারেটর সানন্দে তাঁর নির্দেশ পালনে রাজি হন। এভাবে শুরু হয়ে যায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধ।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান