বিজ্ঞাপন
default-image

সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ মোকাবিলা করছেন চাঁদ মিয়া। এ সময় তাঁর চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হলেন তাঁর নিজের দলের অধিনায়ক। রণক্ষেত্রে নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব তখন তাঁর ওপর। সাহসের সঙ্গে নিজের দলের দায়িত্ব তিনি পালন করে চললেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নিজেও আহত হলেন। আহত চাঁদ মিয়া দমে গেলেন না। জ্ঞান থাকা পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে চললেন। এ ঘটনা ঘটেছিল আখাউড়ায় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২ ডিসেম্বর আখাউড়ায় সারা দিন প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে চাঁদ মিয়ার কোম্পানির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান পাকিস্তানি সেনাদের গোলার স্প্লিন্টারের আঘাতে শহীদ হন।

চাঁদ মিয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বি কোম্পানির সিনিয়র জেসিও (সুবেদার) ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তাঁর কোম্পানির অবস্থান ছিল গাজীপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে। তাঁদের অধিনায়ক ছিলেন একজন পাকিস্তানি (পাঞ্জাবি)। বাঙালি কোনো সেনা কর্মকর্তা কোম্পানিতে ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি সাহসী এক ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বেই বি কোম্পানির বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। তাঁদের বিদ্রোহের খবর পেয়ে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য কোম্পানির সদস্যরাও অনুপ্রাণিত হন। চাঁদ মিয়া সমরাস্ত্র কারখানার অস্ত্রাগারের প্রধান দরজা বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে সেখানে থাকা অস্ত্রশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে ইচ্ছুক ছাত্র-জনতার মধ্যে বিতরণ করেন।

পরে চাঁদ মিয়া তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সমবেত হন তেলিয়াপাড়ায়। সেখান থেকে তাঁদের পাঠানো হয় রামগড়ে। সেখানে তিনি তাঁর দল নিয়ে হাটহাজারী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি ও মানিকছড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধে অংশ নেন। পরে কিছুদিন ৩ নম্বর সেক্টরে এবং এরপর এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

মেজর সুবিদ আলী ভূঁইয়া (পরে মেজর জেনারেল) তাঁর মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস গ্রন্থে চাঁদ মিয়ার বীরত্বের কথা তুলে ধরে লিখেছেন, ‘...সকাল সাতটার দিকে শত্রুরা প্রায় ৩০-৪০ জন সৈন্য নিয়ে আগের মতো সুবেদার চান (চাঁদ) মিয়ার অবস্থানের দিকে টহল দিতে বেরুল। শত্রুরা কাছাকাছি পৌঁছামাত্র চান মিয়ার পুরো দলটা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করল। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে সংঘর্ষ হলো। চান মিয়াদের তীব্র গুলিবর্ষণে ভয়ার্ত হয়ে অনেকগুলো মৃত সৈনিককে ফেলে পাক সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হলো।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান