বিজ্ঞাপন
default-image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে পশ্চিম দিকে ২০ কিলোমিটার দূরে আশুগঞ্জ। মেঘনা নদীর তীরে। নদীর অপর তীরে ভৈরব বাজার। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় আক্রমণ করেন সেখানে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে ছিলেন আবদুল করিম।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সরাইল দখলের পর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে এগিয়ে যেতে থাকে আশুগঞ্জ অভিমুখে। ৮ ডিসেম্বর তাঁরা একই সঙ্গে আশুগঞ্জের পূর্ব দিকে আজবপুর ও দুর্গাপুরের কাছে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছে তাঁরা জানতে পারে, পাকিস্তানি সেনারা আশুগঞ্জ থেকে সরে গেছে।

৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মিত্রবাহিনীর অগ্রগামী একটি দল হঠাত্ আশুগঞ্জে দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ফাঁদে পড়ে। আশুগঞ্জ বিদ্যুেকন্দ্রের ৫০ গজের মধ্যে পৌঁছামাত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণ করে। মিত্রবাহিনীর ওই দল এ ধরনের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। কারণ, তাদের বলা হয়েছিল, আশুগঞ্জ শত্রুমুক্ত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মিত্রবাহিনীর চারটি ট্যাংক ধ্বংস ও ১২০ জন সেনা শহীদ হন।

মিত্রবাহিনীর এই দলের অক্ষত পাঁচটি ট্যাংক পদাতিক সেনাদের পশ্চাদপসরণের সুবিধার্থে নিজেদের নিরাপত্তা বিপন্ন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। কারণ, তারা শহীদ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ফেলে পশ্চাদপসরণে মোটেও আগ্রহী ছিল না। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিজেদের সাময়িক সাফল্যে মাত্রাতিরিক্ত উত্সাহী হয়ে নিজেদের সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে বেরিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়।

এ সময় মিত্রবাহিনীর সাহায্যে এগোনোর নির্দেশ পেয়ে মুক্তিবাহিনী দ্রুত দুর্গাপুর গ্রামে অবস্থান নেয়। মিত্রবাহিনীর আক্রান্ত সেনারা পিছু হটে সেখানে আসছিলেন। পেছনে তাঁদের ধাওয়া করছিল পাকিস্তানি সেনারা। আবদুল করিমসহ মুক্তিযোদ্ধারা দেখলেন, হাজারের ওপরে পাকিস্তানি সেনা লাইন ধরে সামনে ছুটে আসছে। ওরা অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র। মেশিনগান, এলএমজি, রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্রের একটানা গুলিবর্ষণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা দুর্গাপুর। পাকিস্তানি সেনারা এ ধরনের প্রতিরোধ আশা করেনি। হতভম্ব পাকিস্তানি সেনাদের অনেকে জ্ঞানশূন্য হয়ে দিগিবদিক ছোটাছুটি শুরু করে।

তারপর সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আবদুল করিম তাঁর দল নিয়ে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে নিজেদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

আবদুল করিম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান