বিজ্ঞাপন
default-image

সায়ীদুল হাসান ছিলেন একজন মানবহিতৈষী মানুষ। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় সক্রিয় ছিলেন। পেশাগতভাবে কূটনীতিক হলেও রাজনীতিক ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। লালমাটিয়া শারীরিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কলেজে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

শহীদ সায়ীদুল হাসানের জন্ম ১৯১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কামালখানী মহল্লায়। তাঁর বাবার নাম খান বাহাদুর রফিকুল হাসান। সায়ীদুল হাসান ছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট।

সিলেট থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি কলকাতা যান। সেখানে ইসলামিয়া কলেজে স্নাতক শেষে আইন বিষয়ে উচ্চতর লেখাপড়া করেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত সায়ীদুল হাসান ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় ও ১৯৬৪ সালে ঢাকায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক মুসলিম ও হিন্দু পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন। ছাত্রাবস্থাতেই সায়ীদুল বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ভাসানী ন্যাপের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ব্যবসা দিয়ে। তবে দেশভাগের পর কূটনীতিক হিসেবে তিনি লন্ডন ও কলম্বোয় পাকিস্তান হাইকমিশনে কাজ করেছেন। শ্রীলঙ্কায় অবস্থানকালে পূর্ব বাংলার দুর্ভিক্ষের সংবাদে বিচলিত হয়ে পড়েন সায়ীদুল হাসান। টেলিগ্রামযোগে করাচিতে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে ঢাকায় এসে অনাহারক্লিষ্ট মানুষের সেবায় কাজ করতে থাকেন।

সায়ীদুল হাসানের গভীর অনুরাগ ছিল সংস্কৃতিচর্চায়। তাঁর বাড়িতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সমাগম থাকত সর্বদা। তাঁর স্ত্রী ফরিদা হাসান ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পারিবারিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সিলেটের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নন্দরানী ও শ্রী গোবিন্দপুর চা-বাগানের স্বত্বাধিকারী নির্মল চৌধুরী একাত্তরে তাঁর দুই নাবালিকা কন্যাসহ গোপনে ঢাকায় সায়ীদুল হাসানের বাড়িতে আশ্রয় নিতে এসেছিলেন। নির্মল চৌধুরীর চা-বাগানের এক অবাঙালি কর্মচারী (এম জামাল) তাঁকে অনুসরণ করে সায়ীদুল হাসানের বাসা পর্যন্ত আসে। সে কৌশলে নির্মল চৌধুরীকে পাকিস্তানিদের কাছে ধরিয়ে দেয়। সায়ীদুল হাসান নির্মল চৌধুরীকে খুঁজতে গিয়ে একাত্তরের ১৮ মে নিখোঁজ হন। সায়ীদুল হাসান সম্পর্কে তথ্য রয়েছে বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে।

শহীদ সায়ীদুল হাসানের স্ত্রী ফরিদা হাসান মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। তাঁদের একমাত্র ছেলে আন্দালিব হাসান বাবার স্মৃতিচারণা করে প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তাঁর মা ভারতীয় এক জেনারেলের সহায়তায় বন্দী পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সময় তিনি তাঁর স্বামী সায়ীদুল হাসান ও নির্মল চৌধুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়াজী জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের কর্নেল মাকসুদসহ একদল পাকিস্তানি সেনা সায়ীদুল হাসান, নির্মল চৌধুরী ও টাঙ্গাইলের রণদাপ্রসাদ সাহাকে লালমাটিয়া শারীরিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কলেজে গুলি করে হত্যা করেছে।


গ্রন্থনা: হাফিজুর রহমান, প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ