বিজ্ঞাপন
default-image

শাহ মোহাম্মদ সোলায়মান ছিলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ক্যাম্পাসে থাকা অনিরাপদ ভেবে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিনাজপুরে চলে যান। সেখানেও প্রাণসংশয় দেখা দেয়। অবশেষে সেখান থেকে সপরিবার গ্রামের বাড়ি বোচাগঞ্জ থানার ছাতইল গ্রামে চলে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

একাত্তরের ৭ মে ভোরের দিকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামের বাড়ি থেকে শাহ মোহাম্মদ সোলায়মানকে ধরে নিয়ে যায় দিনাজপুরের বিরল থানার পাকুড়া ক্যাম্পে। পরদিন পাকুড়া ক্যাম্প থেকে দুই মাইল দূরে বিরল থানার রাধিকাপুর রেললাইনের ধারে অনেকের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। সেখানে একটি গণকবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

কারমাইকেল কলেজের চেতনায় দ্রোহ নামের একটি প্রকাশনায় শহীদ শাহ মোহাম্মদ সোলায়মানকে নিয়ে তাঁর ছেলে শাহ ইয়াজদানের একটি লেখা থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থেও তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে কারমাইকেল কলেজের শিক্ষকদের হত্যার ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মতিয়ার রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শাহ মোহাম্মদ সোলায়মান ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন। পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। তিনি ছিলেন একজন সাহিত্যানুরাগী ও লেখক। গ্রামে একটি বিরাট পাঠাগার গড়ে তুলেছিলেন। তাঁকে হত্যার পর হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাড়িতে লুটপাট করে। পাঠাগারটি পুড়িয়ে দেয়।

শাহ মোহাম্মদ সোলায়মানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ থানার ছাতইল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম শাহ মোহাম্মদ কবীর, মা জমিরন নেছা। তিনি ১৯৪৮ সালে নওগাঁ ইসলামিক হাই মাদ্রাসা থেকে আলিম ও ফাজিল পাস করে ভর্তি হন নওগাঁর বিএমসি (বশিরউদ্দিন মেমোরিয়াল কো–অপারেটিভ কলেজ) কলেজে। সেখান থেকে ১৯৫০ সালে আইআইএ (ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট অব আর্টস) পাস করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি প্রভাষক হিসেবে ১৯৫৫ সালে হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন দিনাজপুর এসএন (সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) কলেজে। ১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে বদলি হন। একই বছর রংপুরের কারমাইকেল কলেজে উর্দু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন।

শহীদ শাহ মোহাম্মদ সোলায়মানের স্ত্রী রোকাইয়া খাতুন দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে অবসর গ্রহণের পর ইন্তেকাল করেছেন। তাঁদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। প্রথম সন্তান তামান্না রুমিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া শহরের এন্ডারসন বারবাডোর কলেজের রসায়নের শিক্ষক, দ্বিতীয় সন্তান ওয়ারদা রুহীন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট ব্যাংক অব আমেরিকায় কর্মরত, তৃতীয় সন্তান শাহ ইয়াজদান ব্যবসায়ী, চতুর্থ সন্তান শাহ দোরখসান আইনজীবী এবং পঞ্চম সন্তান ফারজানা শারমিন গৃহবধূ। যেদিন শাহ মোহাম্মদ সোলায়মানকে হত্যা করা হয়, সেদিন ফারজানা শারমিনের বয়স ছিল মাত্র ১৭ দিন।

গ্রন্থনা: আরিফুল হক, রংপুর।