বিজ্ঞাপন
default-image

অধ্যাপক খালেদ রশীদ ছিলেন একাধারে শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা এলাকায় তাঁর নেতৃত্বে একটি গেরিলাবাহিনী গড়ে ওঠে। ওই বাহিনীর সঙ্গে ২৫ জুন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন খালেদ রশীদ। পরে আর তাঁর খোঁজ পাও‍য়া যায়নি।

পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) ডুমুরিয়ার স্থানীয় নেতা শেখ আবদুল মজিদের সঙ্গে খালেদ রশীদ স্থানীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে গেরিলাবাহিনী গড়ে তোলেন। চুকনগরের গণহত্যা পাকিস্তানিদের প্রতি এলাকার মানুষের মন বিষিয়ে তুলেছিল। এ কারণে এলাকাবাসী এই গেরিলাবাহিনীকে সমর্থন দেন। রাজাকাররা গেরিলাবাহিনীর কথা জেনে যায়। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হানাদার সেনাদের নিয়ে রাজাকাররা ২৫ জুন শোভনার ওই গেরিলাযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে খালেদ রশীদ ও রঞ্জন বিশ্বাস সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর তাঁদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

শহীদ খালেদ রশীদের সমসাময়িক বা তাঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করতেন, এমন কেউ এখন খুলনায় বেঁচে নেই। তবে গৌরাঙ্গ নন্দীর লেখা বৃহত্তর খুলনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কাজী মোতাহার রহমানের লেখা খুলনার গণমাধ্যম, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং ড. শেখ গাউস মিয়ার লেখা আলোকিত মানুষের সন্ধানে বইয়ে খালেদ রশীদের বীরত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থেও খালেদ রশীদের বীরত্বসহ সংক্ষিপ্ত জীবনী রয়েছে।

১৯৩৪ সালে সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন খালেদ রশীদ। তাঁর বাবা বাহাদুর সরদার ছিলেন ব্যবসায়ী। সিরাজগঞ্জ থেকে এসএসসি, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিএসসি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন খালেদ রশীদ। পরে খুলনা মহিলা কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে ‘আদর্শ কলেজ’ নামে নতুন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এ কলেজের উপাধ্যক্ষ হন তিনি।

জীবিকার তাগিদে খুলনায় এলেও খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বড় জায়গা করে নিয়েছিলেন খালেদ রশীদ। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন খুলনার প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। খুলনা সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে পূর্ব পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সন্দীপন’ গঠিত হলে তিনি এর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬২ সালে খুলনা নগরের খালিশপুরে অবাঙালিরা বাঙালি শ্রমিকদের কাঁচা ঘর ও বস্তি জ্বালিয়ে দেয়। খালেদ রশীদ চিকিৎসাসেবা, আর্থিক সাহায্য ও শীতবস্ত্র দিয়ে ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান।

খালেদ রশীদ পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) খুলনা জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। খুলনা থেকে প্রকাশিত মাসিক সেতু পত্রিকার সম্পাদক ও সন্দীপন নামের মাসিক পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে জনমত গঠনের জন্য ওই পত্রিকা দুটিতে প্রবন্ধ ও নিবন্ধ ছাপা হতো।

গ্রন্থনা: শেখ আল-এহসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা