বিজ্ঞাপন
default-image

তখনো ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো ছড়ায়নি। এলাকার মানুষ ডুবে আছেন ঘুমে। কুখ্যাত রাজাকার কছিম উদ্দীনের তথ্যের ভিত্তিতে ভাটপাড়া ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি হানাদারদের এক বিশাল বাহিনী ঢোকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হিন্দা গ্রামে। হানাদার ঘাতকেরা হামলা করে নুর বকসো মওলার বাড়িতে। তাঁর দুই ছেলে আজিজুল হক ও সাফদার আলীকে পিছমোড়া করে বেঁধে সবার সামনে বেধড়ক পেটাতে থাকে পাকিস্তানি সেনারা। এরপর তারা দুই ভাইকে টেনেহিঁচড়ে ট্রাকে তুলে নিয়ে যায় ভাটপাড়া ক্যাম্পে। সেখানে নির্মম নির্যাতন করে ছোট ভাই সাবদার আলীকে ছেড়ে দিলেও বড় ভাই আজিজুল হকসহ আটজনকে সাহারবাটী গ্রামের টেপুখালী মাঠে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাঠের মধ্যেই তাঁদের মরদেহ তিন দিন পড়ে ছিল। পরে গ্রামবাসী দুটি কবরে তাঁদের মরদেহ দাফন করেন। ঘটনাটি একাত্তরের ১৫ অক্টোবরের।

একাত্তরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মেহেরপুরের কাজলা তীরবর্তী হিন্দা গ্রামটি হয়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্গ এবং মুক্তিকামী জনতার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করা হতো ওই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। কেবল মেহেরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা নন, সমগ্র কুষ্টিয়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে সমবেত হতেন। বিষয়টি অসহ্য হয়ে উঠেছিল স্থানীয় কুখ্যাত রাজাকার কছিম উদ্দীনের কাছে। কছিম গোপনে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে তাঁদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

প্রথম আলোতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তথ্য চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও লেখক মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যপক আবদুল্লাহ আল আমিন শহীদ আজিজুল হক সম্পর্কে একটি তথ্যসমৃদ্ধ লেখা পাঠান। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করা হয়।

আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রফিকুর রশীদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: মেহেরপুর জেলা, মূর্ধন্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ড. মোখলেছুর রহমানের একজন মুক্তিযোদ্ধা বইয়ে এবং মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে শহীদ আজিজুল হকের জীবনী ও অবদানের বর্ণনা রয়েছে। ড. মো. আব্দুল হান্নানের লেখা স্বাধীনতাযুদ্ধে বৃহত্তর কুষ্টিয়া বইয়েও শহীদ আজিজুল হকের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শহীদ আজিজুল হকের স্মৃতি রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সাহারবাটী টেপুখালী মাঠে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

গ্রন্থনা: আবু সাঈদ, মেহেরপুর