বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিত্সার বন্দোবস্ত ছিল না। পরে আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিত্সাসেবার জন্য মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী হাসপাতাল বা চিকিত্সাকেন্দ্র। প্রতিটি সেক্টরে ছিল একটি বা দুটি হাসপাতাল এবং সাবসেক্টরে ফিল্ড মেডিকেল ইউনিট।

৩ নম্বর সেক্টরে তখন দুটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একটি হোজামারাতে। এটি ছিল ৩০ শয্যার। আরেকটি আশ্রমবাড়িতে। সেটি ছিল ১০ শয্যার। চিকিত্সক হিসেবে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাঁদের একজন সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় প্রতিদিনই তাঁর কাছে পাঠানো হতো। কেউ গুলিবিদ্ধ, কেউ শেলের স্প্লিন্টারে আঘাতপ্রাপ্ত। সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমদের তাঁদের চিকিত্সাসেবা দিতেন। বেশির ভাগই বেঁচে যেতেন এবং সুস্থ হতেন। ওষুধ ও চিকিত্সা-সরঞ্জামের স্বল্পতা সত্ত্বেও কয়েকজন ছাড়া কেউ তখন মারা যাননি।

সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে চিকিত্সক হিসেবে চাকরি করতেন। কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের মেডিকেল অফিসার হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল লেফটেন্যান্ট। ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট সিলেটের খাদিমনগরে মোতায়েন ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ এবং ওই রেজিমেন্টের আরেকজন বাঙালি সেনাকর্মকর্তা পাঞ্জাব রেজিমেন্টের হাতে বন্দী ও পরে আহত হন। রেজিমেন্টের একজন পাঠান সেনাকর্মকর্তা তাঁদের সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তাঁর বদান্যতা এবং হাসপাতালের পরিচালক ডা. সামসুদ্দীন আহমদের তাত্ক্ষণিক সুচিকিত্সায় তিনি বেঁচে যান। ৯ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে তিনি বাড়ি যান। ওই দিনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ডা. সামসুদ্দীনকে হত্যা করে।

সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ কিছুদিন পর ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে তাঁকে ৩ নম্বর সেক্টরের চিকিত্সক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এস ফোর্সের চিকিত্সক হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বয়ং বেশ কয়টি যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিত্সাসেবা দেন। দুই-তিনবার অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধেও অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে চান্দুরায় সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ আহত হন। ৫-৬ ডিসেম্বর চান্দুরায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে আকস্মিক এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সময় তিনি এস ফোর্সের অধীন ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানির সঙ্গে ছিলেন। তিনি ও রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর এ এস এম নাসিম (বীর বিক্রম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও সেনাপ্রধান) ক্রসফায়ারে আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান