বিজ্ঞাপন
default-image

মুষলধারায় বৃষ্টি আর ঘোর অন্ধকার। খালি চোখে কিছুই দেখা যায় না। এর মধ্যেই সিরাজুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকেন। তাঁরা দুটি দল (কোম্পানি) এবং কয়েকটি উপদলে (প্লাটুন ও সেকশন) বিভক্ত। তাঁদের লক্ষ্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সীমান্ত ঘাঁটি। সেখানে আক্রমণ করে ঘাঁটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ দল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেয়। কিন্তু সেগুলোর কয়েকটি পাকিস্তানি অবস্থানের বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে পড়ে। এতে হতাহত হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

সিরাজুল ইসলাম ও তাঁর দলের সহযোদ্ধারা এতে দমে যাননি। মনের জোর ও অদম্য সাহসে উজ্জীবিত হয়ে তাঁরা অধিনায়কের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষায় ফাটল ধরে।

প্রথম সারির অবস্থান ছেড়ে পাকিস্তানিরা আন্তঃসীমা প্রতিরক্ষা অবস্থানে সরে যায়। শেলপ্রুফ বাংকারে অবস্থান নিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করে। সিরাজুল ইসলামসহ ২২-২৩ জন অদম্য সাহসী মুক্তিযোদ্ধা প্রচণ্ড গুলির মধ্যেই সামনে এগিয়ে যান। বাংকার অতিক্রম করে তাঁরা মূল প্রতিরক্ষার মধ্যে ঢুকে পড়েন। দুই পক্ষে একপ্রকার হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন সিরাজুল ইসলাম। তুমুল হাতাহাতি যুদ্ধের একপর্যায়ে হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হন তিনি। একঝাঁক গুলির কয়েকটি লাগে তাঁর দেহে। নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাইয়ের। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কামালপুর বিওপিতে। জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুর গ্রামের মাঝামাঝি বিওপির অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। চারপাশে ছিল বাংকার। মোটা গাছের গুঁড়ি ও কংক্রিটের মাধ্যমে সেগুলো আর্টিলারি শেলপ্রুফ করা হয়।

সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা সাহসের সঙ্গে পার হয়ে মূল প্রতিরক্ষায় ঢুকে যান। এ সময় সিরাজুল ইসলামের দুই পাশের অনেক সহযোদ্ধা মাইন ও গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এর পরও তিনি থেমে যাননি। দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় প্রতিশোধের নেশায় এগিয়ে যান। কিন্তু বিজয়ী হতে পারেননি। তবে হেরে গিয়েও দেশমাতৃকার ভালোবাসায় জেতেন তিনি।

সিরাজুল ইসলাম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে যান। সেখানে পুনরায় সংগঠিত হয়ে জেড ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান