বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে। তাঁদের সঙ্গে আছে মিত্রবাহিনীও। প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকল। শহিদুল হক ভূঁইয়া মুক্তিবাহিনীর অবজারভার। তিনি দূরবর্তী স্থানে থাকা যৌথ বাহিনীর গোলন্দাজ (আর্টিলারি) দলকে বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে গ্রিড রেফারেন্স (শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য) জানাচ্ছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোলন্দাজ দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে গোলা ফেলছে।

ভোরে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, চলল দুপুর ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সাঁড়াশি আক্রমণ করেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তেমন ক্ষতি করতে পারল না। বরং তাদেরই ক্ষয়ক্ষতি হলো ব্যাপক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সেনারা দিশাহারা। এ অবস্থায় তাঁদের পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দেওয়া হলো। তাঁর বেতারযন্ত্রেও এল সেই নির্দেশ। সে সময় শহিদুল হক ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামের (বীর বিক্রম) পাশে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাংকার উঁচু স্থানে। সেখান থেকে বৃষ্টির মতো দূরপাল্লার গুলি ছুটে আসছে। শহিদুল হক ভূঁইয়া বেতারযন্ত্রে কথা বলছেন, এ সময় তাঁর চোখের সামনে খন্দকার আজিজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে নিভে গেল তাঁর প্রাণবায়ু। শহীদ হলেন তিনি।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্য যে মনোবল ছিল, এরপর তা-ও ভেঙে পড়ল। যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে। এ ঘটনা ঘটে চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ায় ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত চন্দ্রপুর-লাতুমুড়া। কসবা রেলস্টেশন থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। এই প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল বেশ সুবিধাজনক স্থানে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সেখানে আক্রমণ করে।

এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়। মিত্রবাহিনীর একজন কোম্পানি কমান্ডার (শিখ মেজর), তিনজন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ ৪৫ জন, মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামসহ ২২ জন শহীদ হন। আহত হন অসংখ্য। পরে আহত ও শহীদদের মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে শহীদ হন আরও কয়েকজন।

শহিদুল হক ভূঁইয়া চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়িতে আসেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি ঢাকা সেনানিবাসের ট্রানজিট ক্যাম্পে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে পালিয়ে নিজ এলাকায় এসে তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে যান।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান