বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আখাউড়ার পতনের পর রফিকুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হন চান্দুরা অভিমুখে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার অন্তর্গত চান্দুরা।

মুক্তিযোদ্ধাদের এই অগ্রাভিযানে সামনে ছিল সি দল। এই দলে ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তাঁদের ওপর দায়িত্ব ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শাহবাজপুর সেতু দ্রুত দখল করা।

সি দলকে অনুসরণ করে এ দল। সবশেষে ছিল ডি দল। এই দলের সঙ্গে ছিলেন এস ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ (কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম) এবং ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক। বি দল ছিল পেছনে। কাট অফ পার্টি হিসেবে তাদের ওপর দায়িত্ব ছিল অগ্রসরমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপত্তা বিধান করা।

রফিকুল ইসলাম ও তাঁর সহযোদ্ধারা ধর্মনগর-হরষপুর-পাইকপাড়া হয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দল, বিশেষত এ এবং ডি দলের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব ছিল। এই দুই দল যখন চান্দুরার কাছে ইসলামপুরে পৌঁছায়, তখন বড় ধরনের এক দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে হঠাত্ উপস্থিত হয় একদল পাকিস্তানি সেনা। এ ঘটনা ছিল অভাবিত। নিমেষে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। একটু পর সেখানে হাজির হয় আরও পাকিস্তানি সেনা।

এ সময় রফিকুল ইসলামের দল ছিল বেশ সামনে। তারা খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে ছুটে আসে। তখন পাকিস্তানি সেনারা প্রচণ্ড গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ওপর। আক্রমণের প্রচণ্ডতায় তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। একটি প্লাটুন (উপদল) নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পাশের তিতাস নদীর অপর পাড়ে চলে যায়। বাকি দুই প্লাটুনের একটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অক্ষত থাকে মাত্র একটি প্লাটুন।

অক্ষত ওই প্লাটুনেই ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি ও তাঁর অল্প কয়েকজন সহযোদ্ধা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। তাঁদের কৃতিত্বে বেঁচে যায় কে এম সফিউল্লাহর জীবন এবং শেষ পর্যন্ত পর্যুদস্ত হয় পাকিস্তানি সেনারা। কিন্তু যুদ্ধের একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন রফিকুল ইসলাম।

সেদিন যুদ্ধে রফিকুল ইসলামসহ দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং এ এস এম নাসিমসহ ১১ জন আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ জন নিহত ও ১৪ জন বন্দী হয়। মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ দুই মুক্তিযোদ্ধাকে চান্দুরায় সমাহিত করেন।

রফিকুল ইসলাম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন তিনি। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের পঞ্চবটী সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে এস ফোর্সের অধীন নবগঠিত ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান