বিজ্ঞাপন
default-image

কামালপুর জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত সীমান্ত বিওপি। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সুরক্ষিত একটি ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জুলাইয়ের পর থেকে সেখানে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েক দিন পর পর কামালপুরে আক্রমণ চালান। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ নভেম্বর গভীর রাতে (ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ১৫ নভেম্বর) মুক্তিযোদ্ধারা বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালনার জন্য কামালপুরে সমবেত হন। মুক্তিবাহিনীর তিন কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কামালপুরের পাশের দুটি গ্রামে (ধানুয়া ও খাসিরহাট) অবস্থান নেন। একটি দলে আছেন মো. এনায়েত হোসেন। কাট অফ পার্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে একটি দল।

আক্রমণ শুরু করার আগে একদল মুক্তিযোদ্ধা সড়কের ওপর মাইন স্থাপন করেন। এরপর তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে একযোগে আক্রমণ শুরু করার জন্য নিজ নিজ অবস্থানে অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় একজন মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র থেকে মিস ফায়ার হয়। তখন রাত আনুমানিক দুইটা। ভোরে আক্রমণ শুরু করার কথা ছিল। এদিকে গুলির শব্দে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। তারা সতর্ক অবস্থাতেই ছিল। তারা সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। আকস্মিক আক্রমণে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।

তখন মো. এনায়েত হোসেনসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালান। ১৫ নভেম্বর সকাল ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর আবু তাহের (বীর উত্তম ও পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) আহত হন। অধিনায়ক যখন আহত হন, তখন মো. এনায়েত হোসেন তাঁর কাছাকাছি ছিলেন। তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধার সহযোগিতায় তাঁকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।

মো. এনায়েত হোসেন ১৯৭১ সালে পঞ্চগড় চিনিকলে চাকরি করতেন। মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের শেষ দিকে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধ করেন ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান