বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেয় শেরপুর-সাদিপুরে। তারা এখানে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিরোধযুদ্ধ করে। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. আজিজুর রহমান।

৮ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ সিলেট শহরে, একাংশ খাদিমনগরে এবং আরেকটি অংশ আম্বরখানা ও ওয়্যারলেস স্টেশনে ছিলেন। সেদিন রাতেই তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন।

সিলেটের খাদিমনগরে প্রায় হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। আম্বরখানায় সারা রাত যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ তখন ছিল সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে। তারা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। পাকিস্তানি সেনা সংখ্যায় ছিল বিপুল। সে তুলনায় মুক্তিযোদ্ধা ছিল অনেক কম। রাত তিনটার দিকে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। দক্ষিণ তীরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারাও ব্যাপক গোলাবর্ষণের মুখে পড়েন।

চার ঘণ্টা যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনারা সিলেট শহর দখল করে নেয়। কিন্তু সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি এলএমজি পোস্ট। ওই স্থান তখনো মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা বিরামহীনভাবে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এতে এলএমজিম্যান শহীদ হন। তখন মো. আজিজুর রহমান নিজেই এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকেন। তাঁর সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা অনেকক্ষণ নদী পারাপারে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে অনিবার্য অবস্থা নেমে আসে।

এ সময় মো. আজিজুর রহমান জানতে পারেন, তাঁর ডান দিকের আরআর চালনাকারী দল অবস্থান ছেড়ে চলে গেছে। তখন তিনি দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখতে পান, আরআরটি একটি জিপে পড়ে আছে। চালকও উধাও। এ অবস্থায় তিনি নিজেই ওই গাড়ি চালিয়ে তাঁর কমান্ড পোস্টে যেতে উদ্যত হন। তখনই পাকিস্তানি সেনারা সরাসরি জিপের ওপর গোলাবর্ষণ করে। জিপটি নদীর ঢাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। তিনি আহত হন।

আহত আজিজুর রহমান এরপর পেছনে যান। সেখানে তাঁর দেখা হয় পশ্চাদপসরণরত কয়েকজন সহযোদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত। পরে ওই সহযোদ্ধারা পালিয়ে যান। তিনি এতে বিচলিত হলেন না।

মো. আজিজুর চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রমবাড়ি/বাঘাইছড়ি সাবসেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। পরে এস ফোর্সের ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান