বিজ্ঞাপন
default-image

কামালপুর জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার (বর্তমানে উপজেলা) অন্তর্গত সীমান্ত এলাকা। গ্রামের মাঝামাঝি ছিল সীমান্ত বিওপি। ওই বিওপি ঘিরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান। রাতের অন্ধকারে সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন মিজানুর রহমান খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। ভোরের দিকে তাঁরা আকস্মিক আক্রমণ করেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ সদরুজ্জামান (বীর প্রতীক)। মিজানুর রহমানসহ দলের ৪৮ জনের সবাই ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তুরায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তাঁদের ৪৮ জনকে ১১ নম্বর সাব-সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরে আলাদাভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁরা সেদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন। এ যুদ্ধে মিজানুর রহমান, আমানুল্লাহ কবীরসহ (বীর বিক্রম) কয়েকজন যথেষ্ট বীরত্বের পরিচয় দেন। প্রায় আধা ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে নিহত হয় আট-নয়জন পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিবাহিনীরও কম ক্ষতি হয়নি। আমানুল্লাহ কবীরসহ তাঁর সাতজন সহযোদ্ধা শহীদ হন।

মিজানুর রহমান ১৯৭১ সালে কলেজের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। জুনে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণের পর তাঁকে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জে পাঠানো হয়। ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর আবু তাহের (বীর উত্তম, পরে কর্নেল) তাঁকেসহ ৪৮ জনকে নিয়ে একটি দল গঠন করে আলাদাভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন। তিনি তাঁদের সম্মুখযুদ্ধের জন্য রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি স্থানে তাঁরা সম্মুখযুদ্ধ করেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি মেজর তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর বড় একটি দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কামালপুর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। সেদিন মিজানুর রহমানসহ ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা মেজর তাহেরের সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের ওপর নির্দেশ ছিল, কামালপুরের পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান দখল করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ১০ জন সেখান থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে নিজেদের ঘাঁটিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করতে পারেননি। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এ যুদ্ধের একপর্যায়ে মেজর তাহের আকস্মিকভাবে আহত হন। সে সময় মিজানুর রহমান ও তাঁর এক সহযোদ্ধা দ্রুত আহত মেজর তাহেরকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। সেদিন কামালপুরের যুদ্ধে প্রাণপণে লড়েও মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হতে পারেননি।

মিজানুর রহমান খান স্বাধীনতার পর পড়াশোনা শেষ করে জনতা ব্যাংকে চাকরি করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান