বিজ্ঞাপন
default-image

সীমান্ত এলাকা থেকে কিছুটা দূরে কালাছড়া চা-বাগান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। ভারতে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে খবর এল, ওই চা-বাগানে একদল পাকিস্তানি সেনা অবস্থান নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক সেখানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন।

কালাছড়া চা-বাগানে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনারা সংখ্যায় অনেক। প্রায় এক কোম্পানি। এত বড় দলকে প্রথাগত আক্রমণ করতে হলে চার গুণ শক্তি প্রয়োজন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি মাত্র দ্বিগুণ। তার পরও আক্রমণের সিদ্ধান্ত বহাল থাকল। এ ঘটনা অক্টোবর মাসের। মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে মধ্যরাতে অবস্থান নিলেন কালাছড়া চা-বাগানের কাছে। সেখানে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ভোরে একযোগে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। শুরু হলো ভয়াবহ যুদ্ধ।

মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণ উপেক্ষা করে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যায় চা-বাগানে। এই দলে একটি ক্ষুদ্র উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন মনিরুল ইসলাম। অপর দল শুরুতেই দুর্ঘটনায় পড়ে। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে ওই দলের একজন শহীদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। থেমে যায় তাঁদের অগ্রযাত্রা। মনিরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোদ্ধাদের বীরত্বে তছনছ হয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একাংশের প্রতিরক্ষা। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা আশ্রয় নিল সুরক্ষিত বাংকারে। মনিরুল ইসলাম কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে গ্রেনেড হামলা চালালেন বাংকারে। হতাহত হলো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এতে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য উপদল একযোগে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করল।

প্রচণ্ড যুদ্ধের একপর্যায়ে নিহত ও আহত সহযোদ্ধাদের ফেলে পালিয়ে গেল পাকিস্তানি সেনারা। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনেকে নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা গণনা করে দেখেন, ২৭ জন পাকিস্তানি সেনার মৃতদেহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা সেই মৃতদেহগুলো দাফন করেন। আহতদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে দুজন শহীদ ও সাতজন আহত হন।

মনিরুল ইসলাম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মার্চ মাসে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা যোগ দেন তাতে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাবসেক্টরে। পরে কে ফোর্সের নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে। আখাউড়া, কর্নেল বাজার ও মুকন্দপুরসহ আরও কয়েকটি জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান