বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আখাউড়ার পতনের পর মনির আহমেদ খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা অগ্রসর হন চান্দুরায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার অন্তর্গত চান্দুরা।

মুক্তিযোদ্ধাদের এ অগ্রাভিযানে সবার আগে ছিল ‘সি’। তাদের ওপর দায়িত্ব ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শাহবাজপুর সেতু দ্রুত দখল করা। তাদের অনুসরণ করে ‘এ’ দল। সব শেষে ছিল ‘ডি’ দল। আর ‘বি’ দল ছিল পেছনে। কাট অফ পার্টি হিসেবে তাদের ওপর দায়িত্ব ছিল অগ্রসরমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপত্তা বিধান করা।

এস ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউল্লাহও (বীর উত্তম, পরে সেনাপ্রধান, মেজর জেনারেল ও রাষ্ট্রদূত) সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি যখন চান্দুরার কাছে ইসলামপুরে পৌঁছান, তখন বড় ধরনের এক দুর্ঘটনা ঘটে। দুটি মিলিটারি ট্রাক হঠাত্ সেখানে উপস্থিত হয়। তাতে ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। এ ঘটনা ছিল অভাবিত।

কে এম সফিউল্লাহ তাত্ক্ষণিক পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। পাকিস্তানি সেনারা হাত উঁচু করে ট্রাক থেকে নামতে থাকে। এরপর হঠাত্ তাদের কেউ কেউ দৌড় দেয় এবং বাকিরা গোলাগুলি শুরু করে। নিমেষে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। একটু পর সেখানে হাজির হয় আরও কিছু পাকিস্তানি সেনা।

তখন মনির আহমেদ খান ও তাঁর দলের সহযোদ্ধারা ছিলেন বেশ এগিয়ে। তিনি ছিলেন সি দলে। তাঁরা ধর্মনগর-হরষপুর-পাইকপাড়া হয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তাঁরা দ্রুত পেছনে আসেন। পাকিস্তানি সেনারা প্রচণ্ড গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁদের ওপর। আক্রমণের প্রচণ্ডতায় তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। একটি প্লাটুন (উপদল) নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পাশের তিতাস নদীর অপর পাড়ে চলে যায়। বাকি দুই প্লাটুনের একটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অক্ষত থাকে একটি প্লাটুন।

অক্ষত প্লাটুনে ছিলেন মনির আহমেদ খান। তাঁরা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। তাঁদের সাহস ও বীরত্বে বেঁচে যায় কে এম সফিউল্লাহর জীবন এবং শেষ পর্যন্ত পর্যুদস্ত হয় পাকিস্তানি সেনারা। সেদিন যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং এ এস এম নাসিমসহ (বীর বিক্রম) ১১ জন আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ জন নিহত ও ১৪ জন বন্দী হয়। এ ঘটনা ৬ ডিসেম্বরের।

মনির আহমেদ খান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে। ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র অবস্থায় আক্রান্ত হন। কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের পঞ্চবটী সাবসেক্টরে, পরে এস ফোর্সের (১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান