বিজ্ঞাপন
default-image

রমজান মাস। মঈনুল হোসেনসহ আটজন মুক্তিযোদ্ধা রাতে আগেভাগে সেহির খেয়ে নিলেন। তারপর নিজেদের গোপন শিবির থেকে বেরিয়ে পড়লেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে আছেন মঈনুল হোসেন। পূর্বপরিকল্পনামতো তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক প্রতিরক্ষা অবস্থানে মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ করবেন। তাই রাতের অন্ধকারে দ্রুত এগিয়ে চললেন সেদিকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার আগে তাঁরা নিজেরাই পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের মুখে পড়লেন। অতর্কিত প্রচণ্ড মর্টার আক্রমণে থমকে গেল তাঁদের অগ্রযাত্রা। বিপর্যস্ত অবস্থা তাঁদের। প্রাথমিক হকচকিত অবস্থা কাটিয়ে পাল্টা আক্রমণ করার আগেই দুই সহযোদ্ধাসহ মঈনুল হোসেন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়লেন। পাকিস্তানি সেনারা তাঁর চোখের সামনেই দুই সহযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে এবং তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর তাঁর ওপর শুরু হলো নিষ্ঠুর নির্যাতন। সেই নির্যাতনের মুখেও তিনি পাকিস্তানি সেনাদের কোনো তথ্য দিলেন না। পরে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকেও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হত্যা করে।

এ ঘটনা ২০ অক্টোবর ১৯৭১ সালের। ঘটেছিল কাইয়ুমপুরে। কাইয়ুমপুর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। ক্যাপ্টেন এ এইচ এম আবদুল গাফফারের (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) নির্দেশে তাঁরা সেখানে অপারেশনে গিয়েছিলেন। কিন্তু গুপ্তচরের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ খবর আগেই পেয়ে যায় এবং পাল্টা অ্যামবুশ করে।

মঈনুল ও তাঁর দুজন সঙ্গীকে পাকিস্তানি সেনারা ধরে ফেলার পর সুবেদার আম্বিয়া ওয়্যারলেসে ওই বিপর্যয়ের কথা ক্যাপ্টেন এ এইচ এম আবদুল গাফফারকে জানান। ক্যাপ্টেন তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্লাটুন নিয়ে শত্রুদের পিছু ধাওয়া করার নির্দেশ দেন। সুবেদার আম্বিয়া নির্দেশমতো তাঁর প্লাটুন নিয়ে শত্রুদের ধাওয়া করেন। ফলে শত্রুরা সেখানে নায়েক সুবেদার মঈনুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মেরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সহযোদ্ধারা তাঁকে মুক্ত এলাকায় এনে সামরিক রীতিতে সম্মান জানিয়ে সমাহিত করেন।

মঈনুল হোসেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। কর্মরত ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাঁর ইউনিটের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ সাব-সেক্টরে। কয়েকটি গেরিলাযুদ্ধে তিনি অসাধারণ নৈপুণ্য ও বীরত্ব দেখান। সালদা নদী, বুড়িচং ও কসবায় আকস্মিক আক্রমণ ও অ্যামবুশ করে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপুল ক্ষতি সাধন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান