বিজ্ঞাপন
default-image

৩১ জুলাই ১৯৭১। গভীর রাত। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। একটু আগেও ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। তখন কমেছে। এর মধ্যে সীমান্ত অতিক্রম করে তাজুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা যেতে থাকলেন এফইউপিতে। অদূরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ চালাবেন। তাজুল ইসলাম হেভি মেশিনগানের চালক। তাঁর সঙ্গে আছে আরও চারজন। এ সময় ভারতীয় অবস্থান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে শুরু হলো দূরপাল্লার আর্টিলারি গোলাবর্ষণ।

গোলাবর্ষণের তীব্রতায় চরাচর কেঁপে উঠল। কয়েকটি গোলা এসে পড়ল মুক্তিবাহিনীর এফইউপিতে। নিজেদের গোলায় শহীদ ও আহত হলেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। এফইউপিতে গোলা পড়ায় তাঁরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। একই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও শুরু করল পাল্টা গোলাবর্ষণ।

তাজুল ইসলাম এরপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সহযোদ্ধাদের সহযোগিতায় মেশিনগান দিয়ে গুলি করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকলেন সামনে। চারদিকে মাইনফিল্ড ও কাঁটাতারের বেড়া। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে তাঁরা সাহসের সঙ্গে মাইনফিল্ড ও কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার মধ্যে।

তাঁদের সাহস ও বীরত্ব দেখে পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব। তারা প্রবলভাবে বাধা দিতে থাকল। তাজুল ইসলামদের মেশিনগানের গুলিতে হতাহত হলো অনেক পাকিস্তানি সেনা। এরপর তারা পিছু হটতে লাগল। পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের বিরাট অংশ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এল। এ সময় আবার বিপর্যয়। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের দলনেতা (সালাহউদ্দীন মমতাজ, বীর উত্তম) শহীদ হলেন। একটু পর তাজুল ইসলামের দলনেতাও (ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, বীর বিক্রম, পরে মেজর) গুরুতর আহত হলেন।

এতে নেতৃত্বশূন্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ আবার বিশৃঙ্খল ও ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। এ ঘটনা ঘটে জামালপুর জেলার কামালপুর বিওপিতে। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রায় ৩১ জন শহীদ ও ৬৫ জন আহত হন। তাজুল ইসলাম অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দেন এই যুদ্ধে। তিনি নিজেও আহত হন। তাঁর বাঁ চোয়ালে গুলি ও ঘাড়ে শেলের স্প্লিন্টার লাগে। আহত অবস্থায়ই তিনি তাঁর আহত দলনেতাকে উদ্ধার করার জন্য কাভারিং ফায়ার দেন।

তাজুল ইসলাম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১-এ কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাঁদের আক্রমণ করে। এ সময় তাঁরা যুদ্ধে যোগ দেন। বৃহত্তর সিলেটের ধলই, কানাইঘাট, এমসি কলেজসহ আরও কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধ করেন। ধলই ও এমসি কলেজের যুদ্ধে আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান