বিজ্ঞাপন
default-image

গোলাম মোস্তফা ছোটবেলা থেকেই জেদি ও অভিমানী। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বাবা কয়েকবার চেষ্টা করেন তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার। এ নিয়ে একবার তাঁর সঙ্গে বাবার রাগারাগি হয়। তাতে তিনি খুব কষ্ট পান। সে জন্য স্বাধীনতার পর বাবার সঙ্গে দেখা করেননি, যাননি পৈতৃক বাড়িতেও।

গোলাম মোস্তফা চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার-নির্যাতন দেখে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ তাঁকে উদ্দীপ্ত করে। তখন তিনি ১৮ বছরের যুবক। কয়েক দিন পরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ করেন প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে এস ফোর্সের অধীনে।

গোলাম মোস্তফা ছিলেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর একাদশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা সমবেত হয় বৃহত্তর সিলেটের মাধবপুরে। তাঁরা জানতে পারেন, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে একদল পাকিস্তানি সেনা যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। আলফা কোম্পানির অধিনায়ক তাঁদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই দলকে অ্যামবুশ করার নির্দেশ দেন।

এ জন্য রাতের অন্ধকারে মোস্তফাসহ ১৫-১৬ জন মাধবপুর উপজেলার গোপালপুরে যান। সেখানে সড়কের একটি মোড়ে তাঁরা অ্যামবুশ করেন। তাঁদের কেউ নিজেকে গাছের নিচে লতাপাতায় ঢেকে, কেউ গাছে অবস্থান নেন। সবার দৃষ্টি রাস্তার দিকে। এর মধ্যে ওই সড়ক দিয়ে একটি-দুটি করে কয়েকটি গাড়ি যাওয়া-আসা করে। তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন একসঙ্গে কয়েকটি গাড়িতে আক্রমণ করার জন্য। এই সিদ্ধান্ত তাঁদের বিপদই ডেকে আনে। এর মধ্যে সেখানে দুজন অপরিচিত লোক আসে। তারা সামনে যেতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সামনে যেতে নিষেধ করেন। এরপর তারা পেছন দিকে চলে যায়।

সকাল হওয়ার পর গোলাম মোস্তফা ও তাঁর সহযোদ্ধারা দেখেন, পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলেছে। ওই অপরিচিত লোক দুজন ছিল আসলে পাকিস্তানি সেনাদের দোসর। তারা পাকিস্তানি সেনাদের খবর দিয়েছে। তখন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ লড়াই করা মানে জীবন বিলিয়ে দেওয়া। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সামনে এগিয়ে বিরাট এক পাটখেতে ঢুকে যান। তার পাশেই ছিল একটি খাল। সেখানে অবস্থান নিয়ে গুলি শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা গুলি শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা গুলি-পাল্টা গুলির পর তাঁরা ধর্মগড়ে পশ্চাদপসরণ করেন।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুরা এক যুদ্ধে মোস্তফা আহত হন। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করার পর হঠাত্ গুলি করতে থাকে। তখন প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। তাঁর দুই পায়েই এলএমজির গুলি লাগে। পরে তাঁর এক পা কেটে ফেলা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান