বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই খালেদ মোশাররফ ঢাকা-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার ইপিআর সেনা, পুলিশ-আনসারসহ ছাত্র-যুবক ও সাধারণ জনতাকে সংগঠিত করেন। তাঁর দলে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে বিরাট এক বাহিনী গড়েন। এ বাহিনীর অধীন মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এর আশপাশের এলাকায় শক্ত প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তোলে।

প্রতিরোধযুদ্ধকালে খালেদ মোশাররফ অত্যন্ত দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তাঁর অধীন মিশ্র বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হয়ে তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা বাহিনী (ক্র্যাক প্লাটুন) গড়ে তোলেন। ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা মহানগরের প্রাণকেন্দ্রে একের পর এক অপারেশন করে পাকিস্তানি সেনাদের ভিত্তি কাঁপিয়ে তোলে।

এর মধ্যে (জুন মাসে) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পায়। তখন মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদ মোশাররফকে ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়। পরে (সেপ্টেম্বর) তিনি নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কে ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি দুই দায়িত্বই অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন।

সামরিক ও অবস্থানগত দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধকালে ২ নম্বর সেক্টরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর আওতায় ছিল ঢাকা মহানগর, অর্থাত্ তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী এবং কুমিল্লা সেনানিবাস।

খালেদ মোশাররফের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় ২ নম্বর সেক্টরের নিয়মিত বাহিনী ও স্বল্প প্রশিক্ষণ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অপারেশন করেন। তাঁর সার্বিক নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি সরাসরি যুদ্ধও সংঘটিত হয়। এর মধ্যে সালদা নদীর যুদ্ধ অন্যতম। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত সালদা নদী। মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল কসবায় প্রথাগত (কনভেনশনাল) আক্রমণ চালায়। কসবার বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। পাকিস্তানি সেনাদের সব প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিল সুরক্ষিত ও মজবুত বাংকার।

খালেদ মোশাররফ নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে (সালদা নদী রণক্ষেত্রে) উপস্থিত থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। রণাঙ্গনে তাঁর উপস্থিতির ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। সেদিন গোটা কসবা এলাকায় ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তার পরও সালদা নদী এলাকা দখল করা সম্ভব হয়নি। তবে কসবার বিরাট এলাকা স্থায়ীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে খালেদ মোশাররফ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিক্ষিপ্ত গোলার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান