বিজ্ঞাপন
default-image

খন্দকার সাইদুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা এফইউপিতে পৌঁছে অ্যাসল্ট ফরমেশন তৈরির আগেই শুরু হলো গোলাবর্ষণ। সেই গোলার কিছু অংশ তাঁদের ওপর এসে পড়তে থাকে। অন্যদিকে মুষলধারে বৃষ্টি। এতে তাঁদের মধ্যে একধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা কামালপুরে ঘটে ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রাম কামালপুর। খন্দকার সাইদুর রহমান প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে গেলেন সামনে। এ সময় তাঁর অধিনায়ক সালাহ্উদ্দীন মমতাজ শহীদ হন। এতে শোকের ছায়া নেমে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। নেতৃত্বশূন্যতায় তাঁদের কেউ কেউ পিছু হটতে থাকেন। কিন্তু সাইদুর রহমানসহ কয়েকজন যোদ্ধা পিছু হটেননি। তাঁরা বীরত্ব ও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। সুরক্ষিত বাংকার থেকে পাকিস্তানি সেনারা বৃষ্টির মতো গুলি করছিল। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল। পরে সেখানে শুরু হয় হাতাহাতি যুদ্ধ। দেখতে দেখতে জায়গাটা ভরে যায় লাশের পর লাশে। একসময় সাইদুর রহমানও আহত হন। তাঁর পেটে গুলি লাগে। এ অবস্থায় তাঁর পক্ষে যুদ্ধ করাও সম্ভব ছিল না। তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ সেখানে ছিলেন না। তিনি ক্ষতস্থান চেপে ধরে অনেক কষ্টে পেছনে চলে যান। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে গুয়াহাটির হাসপাতালে তাঁর চিকিত্সা হয়।

সাইদুর রহমান ১৯৭১ সালে যশোর ইপিআর সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখানকার বাঙালি ইপিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। সাইদুর রহমান ছিলেন ৬ পাউন্ডার গান (ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র) ইউনিটের সদস্য। ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় সাঁজোয়া গাড়িতে পাকিস্তানি সেনারা চাঁচড়ায় আসছিল। তখন তাঁরা তাদের ওপর আক্রমণ চালান। তাঁদের গোলার আঘাতে দুটি গাড়ি সম্পূর্ণধ্বংস ও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এর আগে ২৩ মার্চ যশোর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা তোলা হয়। পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিরোধযুদ্ধের পর তিনি ভোমরা প্রতিরক্ষাব্যূহে ছিলেন। জুনের প্রথমার্ধে তাঁকে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি ডি কোম্পানির ১১ নম্বর প্লাটুনে ছিলেন। সিলেটের কানাইঘাট ও সালুটিকরেও তিনি যুদ্ধ করেন।

খন্দকার সাইদুর রহমান বিডিআরের চাকরি থেকে ২০০৬ সালে অবসর নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান