বিজ্ঞাপন
default-image

অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধারা নিঃশব্দে এগিয়ে যেতে থাকলেন গোয়াইনঘাটের উদ্দেশে। তাঁরা কয়েকটি দল। একটি দলে আছেন খন্দকার রেজানুর হোসেন। তিনি মেশিনগান প্লাটুনের সহ-মেশিনগান চালক। গোয়াইনঘাটে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী এক ঘাঁটি। সিলেট জেলার অন্তর্গত গোয়াইনঘাট। উপজেলা সদরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। তিন দিক ঘেরা নদীটি পূর্বপারে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষাব্যূহকে যথেষ্ট সুবিধাজনক করেছে।

তখন ২৩ অক্টোবর মধ্যরাত (ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ২৪ অক্টোবর)। মুক্তিযোদ্ধারা নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে গোয়াইনঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেল। ভোরে পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর একযোগে আকস্মিক আক্রমণ চালাল। একটি দল গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক এলাকার দিক থেকে, অপর দল নদী পার হয়ে পশ্চিম দিক থেকে, আরেকটি লেংগুয়া গ্রাম বাইপাস করে এসে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পশ্চিম দিকের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নাজুক হয়ে পড়ল। এই অবস্থানেই মেশিনগান নিয়ে চালকের সঙ্গে ছিলেন খন্দকার রেজানুর হোসেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। একপর্যায়ে দেখা গেল, মুক্তিযোদ্ধাদের ওই অবস্থানে শুধু খন্দকার রেজানুর হোসেন ও মেশিনগান চালকসহ কয়েকজন আছেন।

পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মধ্যে মাথা তোলা যাচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে খন্দকার রেজানুর হোসেন ও মেশিনগান চালক মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে থাকলেন। তাঁদের বীরত্বে সাময়িকভাবে থেমে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা। একসময় পাকিস্তানি সেনারা তাদের মেশিনগানের অবস্থান চিহ্নিত করে তাঁদের অবস্থানে দুই ইঞ্চি মর্টারের আক্রমণ চালায়। তাতেও তাঁরা বিচলিত হননি। মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারেননি।

পাকিস্তানি সেনারা দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলা ছুড়ে খন্দকার রেজানুর হোসেনদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। সেই সুযোগে পাকিস্তানি সেনাদের আরেক দল তাঁদের ওপর অবিরাম গুলি চালায়। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে খন্দকার রেজানুর হোসেন ও মেশিনগান চালক দুজনই শহীদ হন। এ দুজন জীবন দিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন।

খন্দকার রেজানুর চাকরি ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১-এ এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মার্চ মাসে রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টার্স কোম্পানি ছাড়া অন্যান্য কোম্পানিকে (এ, বি, সি, ডি) সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। তিনি ছিলেন হেডকোয়ার্টার্স কোম্পানির মেশিনগান প্লাটুনের নবীন সৈনিক।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান