বিজ্ঞাপন
default-image

১৪ নভেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কামালপুর ঘাঁটি আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী। তাঁদের সঙ্গে মিত্রবাহিনীর প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সেনাও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো পোশাক পরে এই যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিবাহিনীর একটি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন কাজী জয়নুল আবেদীন। সেদিনের আক্রমণে তিনি তাঁর কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবস্থান নেন রাস্তার পূর্ব পাশে। পশ্চিম পাশে ছিল তাঁদের আরেক কোম্পানি। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশই ছিলেন ছাত্র ও যুবক। তাঁরা রাতে সেখানে অবস্থান নেন। ভোরের আলো ফুটে উঠতেই দেখা গেল সামনেই পাকিস্তানি বাংকার। তখনই বাংকারে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হলো মুক্তিযোদ্ধাদের। পেছন দিক থেকে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আর্টিলারি শেলিং চলছিল। ওয়্যারলেসে জানানো হলো, আর্টিলারি শেলিং বন্ধ হলে মুক্তিবাহিনীর অগ্রবর্তী দল শত্রুর বাংকার আক্রমণ করবে। মুক্তিবাহিনীর ১১ নম্বর সেক্টরের নতুন অধিনায়ক আবু তাহের মিত্রবাহিনীর সঙ্গে কমান্ড পোস্টে ছিলেন। এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কাছে এসে রাস্তার ঢালের পশ্চিম দিকে মুখ করে বসেন।

তখন হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া একটি আর্টিলারি শেল সেখানে এসে পড়ে। শেলের একটি টুকরা আবু তাহেরের পায়ে লাগে। তাঁর পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কাজী জয়নুল আবেদীনের চোখের সামনেই ঘটনাটা ঘটে। এতে বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। ফলে তাঁদের আক্রমণ ব্যর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা পেছন থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। এতে কার্যত পাকিস্তানি সেনারা তাদের ক্যাম্পের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ে। অবশেষে ৩ ডিসেম্বর সহযোগী রাজাকারসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় ১৫০ জন বালুচ সেনা মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। কামালপুর পতনের পর কাজী জয়নুল আবেদীন তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে যান জামালপুরের দিকে।

কাজী জয়নুল আবেদীন পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। দেশে কিছু একটা ঘটতে পারে অনুমান করে তিনি ছুটি নিয়ে ৩ মার্চ পাকিস্তান থেকে দেশে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের আগরতলায় যান তিনি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে মুক্তিবাহিনীর জেড ব্রিগেডের অধিনায়ক জিয়াউর রহমানের অনুরোধে তিনি ওই ব্রিগেডে যোগ দেন। সেখানে তাঁকে স্টোরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ কাজে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। মৃত্যুঝুঁকি আছে জেনেও তাঁর মন পড়ে ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে, সে জন্য পরে মুক্তিবাহিনীর ১১ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার মহেন্দ্রগঞ্জে যোগ দেন। এরপর তাঁকে একটি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান