বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব গোলন্দাজ বাহিনী (আর্টিলারি) ছিল না। এ সময় ভারত মুক্তিবাহিনীকে কয়েকটি ৩.৭ ইঞ্চি প্যাক হাউইটজার (ফিল্ড আর্টিলারি গান) প্রদান করে। তা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর কে ফোর্সের জন্য ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি (গোলন্দাজ দল) গঠন করা হয়।

এর নাম দেওয়া হয় মুজিব (বা ১ ফিল্ড) ব্যাটারি। এতে অন্তর্ভুক্ত হন কবির আহম্মদ। তিনি একটি কামান পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৪ অক্টোবর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সালদা নদী প্রতিরক্ষায় প্রথাগত আক্রমণ (কনভেনশনাল অ্যাটাক) চালায়। চূড়ান্ত আক্রমণের আগে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে মুজিব ব্যাটারির কামান দিয়ে অসংখ্য গোলা ছোড়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা। সে জন্য কামানগুলো পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার চারদিকে বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে গোলা ছোড়া হয়।

এই আক্রমণে কবির আহম্মদও অংশ নেন। তিনি তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত কামান দিয়ে সালদা নদীর বায়েক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেন। সঠিক নিশানায় গোলাবর্ষণ করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এর ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বায়েক এলাকার প্রতিরক্ষার বিশেষত কয়েকটি বাংকারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেখানে মাটির ওপরে ও নিচে ছিল পাকিস্তানিদের তিন স্তরের বাংকার।

বাংকারগুলো ছিল রেলের বগি দিয়ে তৈরি। ওপরের স্তর যুদ্ধের জন্য। মধ্যম স্তর ব্যবহার করা হতো গোলাবারুদ রাখার পাশাপাশি অন্যান্য কাজে। নিচের স্তর ছিল বিশ্রামের জন্য। কবির আহম্মদের দলের ছোড়া কামানের গোলায় দু-তিনটি বাংকার সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোলার আঘাতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও আহত হয়।

বায়েক এলাকায় কবির আহম্মদের দলের নিখুঁত গোলাবর্ষণের পর মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানিদের ওপর। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ চলা অবস্থায়ও তিনি গ্রিড রেফারেন্স (শত্রুর নতুন অবস্থান সম্পর্কে তথ্য) অনুযায়ী গোলাবর্ষণ করেন। এতেও পাকিস্তানি সেনাদের বেশ ক্ষতি হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানিরা বায়েক থেকে পিছু হটে যায়।

কবির আহম্মদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ ইউনিটে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের (তখন পশ্চিম পাকিস্তান) ক্যাম্বেলপুরে কর্মরত ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে তিন মাসের ছুটিতে বাড়ি আসেন। এপ্রিল মাসে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে হরিণা ক্যাম্পের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মুক্তিবাহিনীর গোলন্দাজ দলে অন্তর্ভুক্ত হন। তাঁর পরিচালনায় মুজিব ব্যাটারি বিভিন্ন জায়গায় থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে বেশ কয়েকবার গোলাবর্ষণ করে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান