বিজ্ঞাপন
default-image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার উত্তরে কালাছড়া চা-বাগান। ১৯৭১ সালে এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘাঁটি করে। ৩ আগস্ট রাতে মুক্তিবাহিনীর দুটি দল (দুই কোম্পানি) এখানে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে সার্বিক নেতৃত্ব দেন এম হারুন-অর-রশিদ। মেজর মুহাম্মদ আইন উদ্দিনের (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল) বয়ানে এই যুদ্ধ: ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আক্রমণের জন্য নিয়মমাফিক এক ব্যাটালিয়ন শক্তি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু লেফটেন্যান্ট হারুন সাহস করে প্রস্তুতি নেন। তাঁর অধীনে দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি একটি কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব দেন হাবিলদার হালিমকে। অপর কোম্পানি তাঁর নিজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে থাকে। তবে দুই কোম্পানির সার্বিক নেতৃত্বই তাঁর হাতে ছিল।

‘একদিন রাতে তাঁরা দুটি দলে ভাগ হয়ে পাকিস্তানি অবস্থানে আঘাত হানেন। হাবিলদার হালিমের দলের একজন যোদ্ধা প্রথমেই শহীদ হওয়ায় তাঁরা আর সামনে অগ্রসর হতে পারেননি। তিনি (হালিম) নিজেও শহীদ হন।

‘লেফটেন্যান্ট হারুন তাঁর কোম্পানি নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ করেন। তাঁর দলের আক্রমণে পাকিস্তানি অনেক সেনা হতাহত হয়। কিছু পাকিস্তানি সেনা বাংকারে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাংকারে গ্রেনেড চার্জ করে তাদের হত্যা করেন।

‘এরপর লেফটেন্যান্ট হারুন হালিম কোম্পানির লক্ষ্যস্থলে আক্রমণ করেন। সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের পর্যুদস্ত করে স্থানটি দখল করেন। কালাছড়া থেকে একটি এলএমজিসহ প্রায় ১০০ অস্ত্র এবং ২৭ জন পাকিস্তানি সেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। আমাদের দুজন শহীদ ও সাতজন আহত হন। এর পর থেকে কালাছড়া সব সময় মুক্ত ছিল। পাকিস্তানিরা পরবর্তী সময়ে আর কখনোই কালাছাড়া চা-বাগানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি।’

এম হারুন-অর-রশিদ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তাঁর পদবি ছিল লেফটেন্যান্ট। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মেজর শাফায়াত জামিলের (বীর বিক্রম, পরে কর্নেল) নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলের বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। এতে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য।

প্রতিরোধযুদ্ধের পর মে মাসের মাঝামাঝি একদিন সন্ধ্যায় ঘটনা। আগে খবর পেয়ে হারুন-অর-রশিদ কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে আখাউড়া-মুকুন্দপুর রেলপথের এক স্থানে বিস্ফোরক বসিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি রসদবাহী ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। ট্রেনটি আসামাত্র তাঁরা বিস্ফোরণ ঘটান। এতে রেলবগি ও রেলপথের একাংশের ব্যাপক ক্ষতি হয়, নিহত হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা।

এম হারুন-অর-রশিদ পরবর্তী সময়ে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। তাঁর যুদ্ধ এলাকা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়ার একাংশ।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান