বিজ্ঞাপন
default-image

সীমান্ত এলাকা থেকে দিনের বেলা মাধবপুর অভিমুখে রওনা হন আলিমুল ইসলামসহ ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের লক্ষ্য, সড়কে চলাচলরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়ি অ্যামবুশ করা।

২৩ মে বেলা আনুমানিক দুইটায় আলিমুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা ওই সড়কের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছান। তাঁরা সেখানে দুটি ট্যাংক-বিধ্বংসী মাইন পেতে আড়ালে পাকিস্তানি সেনাবাহী গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এরপর সময় গড়ায়। কিন্তু সেদিন পাকিস্তানিদের কোনো গাড়ি আসেনি। মুক্তিযোদ্ধারা এতে হতাশ হননি। রাতে তাঁরা অ্যামবুশস্থলেই থাকেন।

পরদিন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত গাড়ি আসেনি। এরপর তাঁরা বেশির ভাগ দুপুরের খাবার খেতে বসেন। বাকিরা থাকেন সতর্ক অবস্থায়। এ সময় পাকিস্তানি সেনাদের বিরাট এক কনভয় তাঁদের অ্যামবুশস্থলের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। খাবার ফেলে তাঁরা দ্রুত নিজ নিজ অবস্থানে যান। আলিমুল ইসলামসহ তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা ছিলেন একদম সামনে। তাঁদের ওপর দায়িত্ব ছিল মাইন বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম গোলাগুলি শুরু করার।

জিপ, লরি ও পিকআপ মিলে পাকিস্তানি ওই কনভয়ে মোট ২২টি গাড়ি ছিল। এই সংখ্যা সম্পর্কে তাঁর দলনেতা ও পেছনে থাকা সহযোদ্ধারা অনুমান করতে পারেননি। এতে আলিমুল কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। কারণ, সংখ্যায় তাঁরা মাত্র ২২ জন আর পাকিস্তানিদের সংখ্যা তাঁদের চেয়ে সাত-আট গুণ বেশি। পাল্টা আক্রমণে তাঁদের সবার মারা পড়ার আশঙ্কাই ছিল বেশি। কিন্তু তার পরও তিনি বিচলিত হননি।

এর মধ্যে পাকিস্তানিদের একদম সামনের গাড়ি (জিপ) সেতুর বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গাড়িটিও যায়। চতুর্থটি ছিল পিকআপ ভ্যান। সেটি যাওয়ার সময় তাঁদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরিত হয়। পিকআপটি উড়ে কয়েক গজ দূরে গিয়ে পড়ে। দ্বিতীয় গাড়িরও একই ভাগ্য ঘটে। পেছনের গাড়িগুলো থেমে যায়।

এ সময় আলিমুল ইসলামসহ তাঁর সহযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। তাঁদের গোলাগুলিতে হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। অক্ষত পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। পাকিস্তানিরা অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করতে শুরু করেন। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ধাওয়া করে। কিন্তু তাঁদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

আলিমুল ইসলাম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘এস’ ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান