বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট শেরপুর জেলার নকশী বিওপিতে ভয়াবহ এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন আমীন আহম্মেদ চৌধুরী।

এর বর্ণনা শোনা যাক তাঁর বয়ানে। ‘৩ আগস্ট (রাতে ঘড়ির সময় অনুযায়ী ৪ আগস্ট) আমি দুই কোম্পানি যোদ্ধা নিয়ে নকশী বিওপি আক্রমণ করি। অ্যাসেম্বলি এরিয়া থেকে যোদ্ধারা অত্যন্ত সাবলীল গতিতে এফইউপিতে রওনা হন।

‘তিনটা ৪৫ মিনিটে আমাদের আর্টিলারি গর্জে ওঠে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, যুদ্ধের আগেই এফইউপিতে আমাদের নিজেদের আর্টিলারির কয়েকটি গোলা এসে পড়ে। একই সময় পাকিস্তানি আর্টিলারিও গর্জে ওঠে। এর মধ্যেই আমরা এক্সটেনডেড ফরমেশন তৈরি করি।

‘একটু পর অ্যাসল্ট লাইন ফর্ম করে আমি চার্জ বলে হুংকার দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র উঁচু করে “জয় বাংলা” ধ্বনি দিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যান। শত্রু পাকিস্তানি সেনাদের বেয়নেট চার্জের জন্য তাঁরা রীতিমতো দৌড়াতে থাকেন। আমাদের মনোবল দেখে পাকিস্তানি সেনারা তখন পলায়নরত।

‘ঠিক তখনই শত্রুর আর্টিলারির শেলভো ফায়ার (এয়ার ব্রাস্ট) এসে পড়ে আমাদের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এতে কিছু মুক্তিযোদ্ধা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আমার ডান পায়ে একটা শেল লাগে।

‘দেখতে পেলাম, গুটিকতক অতি সাহসী মুক্তিযোদ্ধা পলায়নরত শত্রু পাকিস্তানি সেনাদের মারছেন। কেউ কেউ মাইন ফিল্ডে ফেঁসে গিয়ে উড়ে যাচ্ছেন। কেউবা শত্রুর গুলি খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। আমি তাঁদের মন চাঙা রাখার জন্য জোরে জোরে জয় বাংলা চিত্কার দিয়ে বললাম, আগে অগ্রসর হও। এরপর পাকিস্তানিদের বিওপি তছনছ হয়ে গেল।

‘এমন সময় এক পাকিস্তানি সেনা অস্ত্র উঁচু করে আমার দিকে ধেয়ে আসতে থাকলে সালাম (অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র, এক সুবেদার মেজরের ছেলে) নামে এক ছেলে তাকে খতম করে দেয়। কিন্তু অন্য জীবিত পাকিস্তানি সেনারা আমাকে ধরার চেষ্টা করে। আমি সাইড রোল, ক্রল করে সরে যাওয়ার সময় আবার আমার ডান কনুইয়ে গুলি লাগে। এর পরের ঘটনা সে আরেক কাহিনি।’

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধকরণে গোপনে নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ মার্চ ঢাকায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে যান এবং নানা ঘটনাপ্রবাহের পর মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান