বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। মধ্যরাতে তাঁরা সমবেত হন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সালদা নদী প্রতিরক্ষার তিন দিকে। আবুল হাশেম খান একটি দলের (কোম্পানি) উপদলের (প্লাটুন) নেতৃত্বে।

চারদিক নিস্তব্ধ। মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে ঝিঁঝি পোকার ডাক। একটু পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে শুরু হয় গোলাবর্ষণ। গোলা আসে পেছন থেকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গোলন্দাজ দল (মুজিব ব্যাটারি) কামানের গোলাবর্ষণ করে। ভারতীয় গোলন্দাজ দলও সীমান্ত এলাকা থেকে দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ করে। শত শত গোলা এসে পড়ে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষায়।

গোলাবর্ষণের প্রচণ্ডতা ও তীব্রতা এমন যে অনেক দূরে থাকা আবুল হাশেম খানদের সবার পায়ের নিচের মাটি কেঁপে ওঠে। বিকট শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। এত বড় প্রথাগত (কনভেনশনাল) আক্রমণ এর আগে সালদা নদীতে হয়নি। ব্যাপক গোলাবর্ষণে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা প্রায় তছনছ ও বেশির ভাগ বাংকার ধ্বংস হয়ে যায়। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা।

গোলাবর্ষণ শেষ হলে আবুল হাশেম খান সহযোদ্ধাদের নিয়ে আবার এগিয়ে যান। তাঁদের লক্ষ্য সালদা নদী এলাকার নয়নপুর দখল করা। দ্রুত তাঁরা পৌঁছে যান লক্ষ্যস্থলের আনুমানিক ৪০০ গজ দূরে। ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর। নিমেষে শুরু হয়ে যায় মেশিনগান, এলএমজি আর রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি।

আবুল হাশেম খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন। হতোদ্যম পাকিস্তানি সেনারা সকালে নয়নপুর থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সালদা রেলস্টেশনে। কিন্তু একটু পর তাদের ওপর শুরু হয় পাল্টা আক্রমণ। পুনঃসংগঠিত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ ছিল বেশ জোরালো।

আবুল হাশেম খান সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিহত করেন। তাঁর দলের অন্যান্য উপদলও আক্রমণ প্রতিহত করে। দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ চলাবস্থায় একপর্যায়ে হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হন আবুল হাশেম খান। তাঁর পিঠে গুলি লাগে। এতে তিনি দমে যাননি। আহত অবস্থাতেই বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারেননি। অধিক রক্তক্ষরণে তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

তখন সহযোদ্ধারা আবুল হাশেম খানকে ফিল্ড চিকিত্সাকেন্দ্রে পাঠান। প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাঁকে পাঠানো হয় আগরতলায়। কিন্তু ক্রমে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। পরে উন্নত চিকিত্সার জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তর করা হয়। এখানে তাঁর চিকিত্সা চলাকালে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়।

আবুল হাশেম খান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান