বিজ্ঞাপন
default-image

আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। ১৯৭১ সালের মার্চে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে তাঁদের কোম্পানিকে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। ২৪ মার্চ তিনি কোম্পানির সঙ্গে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ছিলেন। ২৬ মার্চ তাঁরা বিদ্রোহ করে বগুড়া-রংপুর সড়কে অবস্থান নেন। ২৮ মার্চ রংপুর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ও ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্টের একাংশ বগুড়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই দলকে আক্রমণ করেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে তাঁদের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট রফিককে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কৌশলে আটক করে। এতে তাঁরা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লেও যুদ্ধ চালিয়ে যান। তাঁদের প্রবল প্রতিরোধে পাকিস্তানি সেনারা রংপুরের দিকে পশ্চাদপসরণ করে। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অন্যদিকে তাঁর ১১ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন।

পরে মুক্তিযোদ্ধারা রংপুরের উদ্দেশে রওনা হন। পথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অ্যামবুশে পড়েন। এ সময় তাঁরা বেশ পরিশ্রান্ত ছিলেন। ক্লান্তিতে সবার চোখ বুজে আসছিল। তার পরও তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধে তাঁর বেশির ভাগ সহযোদ্ধাই শহীদ হন। আবুল কালাম আহত হন। দুই যুদ্ধে দলের ৩৫ জনের মধ্যে ৩৩ জনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। তিনি ও সহযোদ্ধা আবুল কাশেম বেঁচে যান। এর পরও আবুল কালাম দমে যাননি। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ভারতে গিয়ে মূল দলের সঙ্গে মিলিত হন। পুনর্গঠিত হওয়ার পর যুদ্ধ করেন ১১ নম্বর সেক্টরের মানকারচর সাব-সেক্টরের অধীনে। কোদালকাটি, চিলমারী, উলিপুরসহ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। ১৮ অক্টোবর ভোরে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল একযোগে চিলমারীর পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে। একটি দলে ছিলেন আবুল কালাম। তাঁরা ভোর চারটায় ওয়াপদার প্রধান ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। মুহূর্তেই প্রলয়কাণ্ড শুরু হয়। আগুনের লেলিহান শিখা আর ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বেলা ১১টার মধ্যে ওয়াপদার অবস্থান ছাড়া বাকি সব অবস্থান মুক্তিবাহিনী দখল করে নেয়। কয়েক দিন যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী শেষ পর্যন্ত গোটা চিলমারীই মুক্ত করতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, ইপিসিএএফ, রাজাকার ও পুলিশ মিলে প্রায় ১০০ জন মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়। গোলার আঘাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুটি স্পিডবোট ও তিনটি লঞ্চ সম্পূর্ণধ্বংস হয়ে যায়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান