বিজ্ঞাপন
default-image

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিলেন পাইকপাড়ায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট মহাসড়কের পাশে পাইকপাড়া। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত।

বি দল নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান নিয়েছে—এ খবর পাওয়ার পর বাকি মুক্তিযোদ্ধারা হরষপুর-সরাইল হয়ে রওনা হন চান্দুরা অভিমুখে। তিনটি দল—এ, সি এবং ডি কোম্পানি। তারা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকল। ডি দলে আছেন আবদুল মালেক। তাঁদের বাঁ দিকে এ এবং সি দল।

যুদ্ধের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডি দল অগ্রসর হচ্ছে অন্য দুই দলের পেছনে। একদম সামনে সি দল। তাদের ওপর দায়িত্ব কৌশলে শাহবাজপুর সেতুর দখল নেওয়া।

এই অভিযানে বিকেলে এস ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউল্লাহও (বীর উত্তম, পরে সেনাপ্রধান ও মেজর জেনারেল) মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ তাঁর অবস্থান ডি দলের কিছুটা সামনে। তাঁর ও ডি দলের মধ্যে ব্যবধান অল্প।

ডি দলের মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকলেন দৃপ্ত পদভারে। তাঁদের সামনে কে এম সফিউল্লাহ। কোথাও তাঁরা বাধা পাননি। বিকেলের দিকে তাঁরা পৌঁছে গেলেন ইসলামপুরের কাছে। অদূরে চান্দুরা। এ সময় সেখানে আকস্মিকভাবে হাজির হলো একদল পাকিস্তানি সেনা। হঠাত্ তাদের উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

পাকিস্তানি সেনাদের এই উপস্থিতি ছিল একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত। আবদুল মালেকসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভেবে পাচ্ছিলেন না, এটা কীভাবে ঘটল। কেননা, তাঁদের পেছনে বি দল। তাদের ওপর দায়িত্ব অগ্রসরমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কে এম সফিউল্লাহ পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে গোলাগুলি শুরু করল।

নিমেষে শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড যুদ্ধ। আবদুল মালেক ও তাঁর সহযোদ্ধারা পড়ে গেলেন উভয় সংকটে। একদিকে কে এম সফিউল্লাহ পাকিস্তানি সেনাদের আওতায়, অন্যদিকে তাঁরা ক্রসফায়ারের মধ্যে। আকস্মিকভাবে শুরু হওয়া যুদ্ধে ক্রসফায়ারে পড়ে আহত হয়েছেন তাঁদের অধিনায়ক এ এস এম নাসিমসহ কয়েকজন।

আবদুল মালেক বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হলেন তাঁর অন্য সহযোদ্ধারাও। এই যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট বীরত্ব ও সাহসের পরিচয় দেন।

আবদুল মালেক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনর্গঠিত হয়ে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে এস ফোর্সের অধীনে তিনি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান