বিজ্ঞাপন
default-image

সাবেক সিম্যান আবদুল খালেক ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে বাবার ইচ্ছায় স্বেচ্ছা অবসর নেন। এখন জানা যাক তাঁর নিজ জবানিতে (লিখিত) কিছু কথা:

‘১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষে একদিন তত্কালীন ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমদ চৌধুরী (বীর বিক্রম, পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) আমাকে ডেকে বললেন, “তোমাকে একটি অপারেশনে যেতে হবে।” ৩ সেপ্টেম্বর লালগোলা থেকে আখরিগঞ্জ যাই। সেখানে আমাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ দেন।

‘আমরা বাংলাদেশের ভেতরে এসে আদিবাসী পল্লির এক বাড়িতে আশ্রয় নিই। রেকির তথ্য পাওয়ার পর রাতে (৫ সেপ্টেম্বর) অপারেশন করার জন্য বের হই। যাওয়া ও ফেরত আসার একমাত্র পথের এক স্থানে ছিল রাজাকার ক্যাম্প। রাজাকাররা যাতে পাল্টা আক্রমণ করতে না পারে, সে জন্য ওই বাড়ির অদূরে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাহারায় রেখে যাই।

সেই রাতে বৃষ্টি হয়। মেঘ সরে যাওয়ার পর চাঁদের আলোয় দূরের অনেক কিছু দেখা যাচ্ছিল। রাজাকাররা সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে ফেলে এবং গুলি শুরু করে। এর আগেই অবশ্য আমরা প্রেমতলি হাসপাতাল পার হয়ে সেতুর কাছে পৌঁছাই। রাজাকাররা গুলি শুরুর পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রেমতলি ক্যাম্প থেকে দুটি গাড়ির একটি কলেজের সামনে, অপরটি ইব্রাহিম শাহর বাড়ির কাছে অবস্থান নিয়ে গোলাগুলি শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাদের কাছাকাছি আরও দুটি অবস্থান থেকেও গুলি শুরু হয়।

‘চারদিক থেকে ফায়ার শুরু হওয়ার পর আমি সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানেই অ্যামবুশ করি; যদি পাকিস্তানি গাড়ি আসে, এ আশায়। কারণ, আমরা বিল ও নদী পার হতে পারিনি। পার না হয়ে সরাসরি আক্রমণ করাও সম্ভব ছিল না। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করি। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা আসেনি।

‘এরপর আমরা পেছনে রওনা দিই। চেয়ারম্যান বাড়ির দক্ষিণে পুকুরপাড়ে যাওয়া মাত্র রাজাকাররা আমাদের দেখে ফেলে এবং গুলি শুরু করে। আমি সহযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণ চালাতে বলি। রাজাকাররা ছিল দালানবাড়ির ছাদে। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে আমরা সুবিধা করতে পারছিলাম না।

‘এ অবস্থায় আমি ছাদে গ্রেনেড চার্জ করার কথা ভাবি। কিন্তু কেউ তা করতে রাজি না হওয়ায় আমি নিজেই তা করার সিদ্ধান্ত নিই। জয়নাল নামে একজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে আমি রওনা হই। তিনি আমার বেশ পেছনে ছিলেন এবং একপর্যায়ে হঠাত্ চিত্কার করে ওঠেন। এ সময় আরও কিছু ঘটনা ঘটে এবং জয়নাল হঠাত্ তাঁর এসএলআর দিয়ে গুলি করেন। তখন রাজাকাররা পাল্টা গুলি চালায়। একটি গুলি আমার বুকে লাগে।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান